ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

গোখাদ্যের চড়া দাম

কচুরিপানাই ভরসা, বেশি খাওয়ালেই বিপদ

কচুরিপানাই ভরসা, বেশি খাওয়ালেই বিপদ

রাস্তার পাশের ডোবা থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে ভ্যানে তুলছেন খামারি। চারঘাটের পুঠিয়া সড়কের ফকির মোড়। ছবি: সমকাল

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ০২:২৪

ভারী বর্ষণ ও বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানের গোচারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে ছিল। এর প্রভাব পড়েছে গোখাদ্যে। খড়ের দাম চড়া। গোখাদ্যের সংকটের কারণে স্বল্পমূল্যের কচুরিপানাই ভরসা। তবে এতেও বিপদ দেখছেন রাজশাহীর চারঘাটের খামারি ও সাধারণ কৃষক। কচুরিপানা বেশি খাওয়ানোয় অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদি পশু। কমে যাচ্ছে দুধের পরিমাণ। 

কৃষক ও খামারিরা বলছেন, এ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা শুরু হলে পশুখাদ্যের দাম বাড়তে থাকে। বন্যার পানি কমলেও সব ধরনের গোখাদ্যের দাম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। মধ্যম ও স্বল্প আয়ের পশুপালনকারীরা বাধ্য হচ্ছেন জলজ আবর্জনা ও কচুরিপানা তুলে এনে গরুকে খাওয়াতে। 

ঝিকরা গ্রামের মখলেসুর রহমানের দুটি ষাঁড় ছিল। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এদের ঘাসের পরিবর্তে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছিলেন। কয়েকদিন পর একটি গরুর হঠাৎ পাতলা পায়খানা ও জ্বর আসে। তিন দিনের মাথায় গরুটি মারা যায়। একই কারণে মারা গেছে রায়পুর এলাকার কামাল হোসেনের গরু। 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেশিনে কাটা খড় প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি মণ খড়ের দাম ১ হাজার টাকা। খেসারির ভুসি এক বস্তা (২৫ কেজি) ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, এক বস্তা (৩৫ কেজি) গমের ভুসি ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ভুট্টার ভুসি এক বস্তা (২০ কেজি) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা ঘাস মিলছে না। অল্প কিছু উঁচু জমি বা রাস্তার পাশ থেকে কিছু কাঁচা ঘাস পাওয়া গেলেও তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। 

চারঘাট-পুঠিয়া রোডের সরদহ, নন্দনগাছী ও ভাটপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের নয়নজুলিগুলোতে জন্মেছে নানা প্রজাতির কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদ। কয়েকজন ভ্যান নিয়ে এসেছেন সেই কচুরিপানা সংগ্রহ করতে। 

বরকতপুর এলাকার নলকূপ মিস্ত্রি আসিফ আলী বলেন, দুটি গাভি নিয়ে খামার গড়ে তুলেছি। প্রতিদিন কাজ শেষ করে মাঠ থেকে ঘাস কেটে গাভিকে খাওয়ানো হয়। সঙ্গে কিছু খড় ও ভুসি থাকে। অতিবৃষ্টির কারণে বাজারে গোখাদ্যের দাম বেশি। কয়েকদিন ধরেই গাভি দুটিকে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছি। এতে দুধ একেবারে কমে গেছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাধারণ কৃষক ও খামারি পর্যায়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৫টি গরু ও ১১ হাজার ২৫৩টি মহিষ রয়েছে। রাজশাহীতে দুধের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭ লাখ টন। উৎপাদন হয় প্রায় ৬.২ লাখ টন। চারঘাট উপজেলায় ১৪৭টি গরু ও মহিষের খামার রয়েছে। 

পাতির বিল এলাকায় কচুরিপানা সংগ্রহ করছিলেন বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার রমজান আলী। তিনি বলেন, চড়া দামের কারণে গরুগুলোকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারছি না। বাধ্য হয়ে প্রায় আট কিলোমিটার দূর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহের জন্য এসেছি। প্রতি ভ্যান কচুরিপানা নিয়ে যেতে ১৫০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সরকার এনায়েত কবির বলেন, গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা খাওয়ানো গরু-মহিষের স্বাস্থ্য ও দুধ উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যের সংকট দেখা দিলে কচুরিপানা রোদে শুকিয়ে অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ডোবা-নালা থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে সরাসরি খাওয়ালে বদহজম হতে পারে। বেশি খাওয়ার ফলে মৃত্যুও হতে পারে। 

আরও পড়ুন

×