ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘তরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে’

‘তরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে’

মিরদেহ উদ্ধার করা শিশু আবদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:১১ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৫:৪৮

‘তরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে। কে আমারে মা কইয়া ডাকবো। পোলাডা কোলে উঠতে চাইছিলো লই নাই, এখন আমারে ছাইড়া এক্কেবারে চইলা গেলো। আল্লায় আমার বুকের ধনরে কাইরা নিছে। আমি এহন কি নিয়া বাঁচমু। তোরা আমার পোলাডারে ফিরাইয়া আইন্না দে’- এমন কথা বলে আহাজারি করে কাঁদছেন নিহত শিশু আবদুর রহমানের মা আছিয়া বেগম।

আজ শনিবার চার বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা। বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত পুকুরে থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু আবদুল্লাহ। মরদেহ উদ্ধারের খবরে মা আছিয়া বেগমের আহাজারীতে গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাবা-মায়ের কান্নায় কাঁদছেন পাড়া প্রতিবেশিরাও। নিহত শিশু পুত্রের মৃতদেহ জড়িয়ে কান্না করতে গিয়ে বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন মা আছিয়া বেগম। 

শিশু পুত্রকে হারিয়ে অনেকটাই নির্বাক বাবা আমির হোসেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চার পোলার মধ্যে সবার ছোট্ট আবদুর রহমান। সেদিন সকালে পোলাডারে কোলে নিয়া আদর কইরা কামে যাই। কাম থেইক্কা আইসা আর পোলাডারে পাইলাম না। ওরে কাইরা নিয়া আল্লা কি সাজা দিলো আমারে।’ এমন কথা বলতে গিয়ে জ্ঞানহীন হয়ে পড়েন শিশুটির বাবা। আজ শনিবার সকালে নিহত শিশুর আবদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

দুলারহাট থানার নুরাবাদ ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেশী অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে ওই বাড়ি থেকেই নিখোঁজ হয় শিশু আবদুর রহমান। সে ওই গ্রামের আমির হোসেন মাঝির ছেলে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে শিশুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডির একদিন পর বসতবাড়ির অদূরের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে মিললো শিশুটির মরদেহ।

নিহত শিশুর চাচাতো ভাই ইব্রাহিম হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার তার চাচি আছিয়া বেগম শিশুপুত্র আবদুর রহমানকে নিয়ে তাদের দুঃসর্ম্পকের আত্বীয় অসুস্থ নজির মাঝিকে দেখতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আবদুর রহমান ওই বাড়ির অপর শিশুদের সঙ্গে ঘরের বাইরে খেলাধুলা করছিল। অসুস্থ আত্মীয়কে দেখার পর মা তিনি ঘর থেকে বেড়িয়ে শিশু পুত্রকে না দেখে খুঁজতে থাকেন। অনেক খোঁজাখুজির পর কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরে থানায় জিডি করা হয়। এরপর আজ শনিবার সকালে পরিত্যক্ত পুকুরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তি ওজু করতে গিয়ে তার মরদেহ ভাসতে দেখেন। পরে পুলিশ এসে আবদুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে। 

দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইফতেখার জানান, নিখোঁজের দুই দিন পর পুকুর থেকেশিশু আবদুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×