ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

উখিয়ায় আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি

হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চাইলেন রোহিঙ্গারা

হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চাইলেন রোহিঙ্গারা

মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১) আশ্রয়শিবিরে পৌঁছায় আইসিসির প্রতিনিধি দল। ছবি: সমকাল

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:১২

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতনের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য কক্সবাজারের উখিয়া আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন তারা। এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১) আশ্রয়শিবিরে পৌঁছায় আইসিসির প্রতিনিধি দল। এর পর সেখানে ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে টানা প্রায় দুই ঘণ্টা ৪০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তারা। পরে তারা ক্যাম্প-৪ পরিদর্শন করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের একটি রোহিঙ্গা দলের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে দলের সদস্যরা ছাড়া অন্য কারও যাতায়াত সীমিত রাখা হয়। দুপুরে ক্যাম্প-৪ আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করে আরও কয়েক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

প্রথম বৈঠক শেষে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা আলী হোসেন সমকালকে বলেন, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ক্যাম্প ইনচার্জের নির্মিত একটি কার্যালয়ে ৪০ জনকে ডাকা হয়। তারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি কথা বলেন কয়েকজনের সঙ্গে। গুলিতে স্বজন হারানোর স্মৃতি, ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং রোহিঙ্গা নারীদের অপহরণের পর ধর্ষণ ও ধনসম্পদ লুটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয় রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি নির্যাতন ও নিপীড়নে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত সময়ে নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান বলেও জানান রোহিঙ্গারা।

আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, আশ্রয়শিবির পরিদর্শন শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় তাঁর কার্যালয়ে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাসেবা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গারা আইসিসির প্রধান কৌঁসুলিকে জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে তারা নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। 

এর জবাবে করিম খান বলেন, ‘বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা আইনি লড়াইয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ বৈঠক শেষে তিনিসহ প্রতিনিধি দল বিমানে ঢাকায় চলে যান।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আট লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি।

আরও পড়ুন

×