ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পুলিশকে গুলি করে পালানো কে এই ‘ছোট সাজ্জাদ'

পুলিশকে গুলি করে পালানো কে এই ‘ছোট সাজ্জাদ'

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪৭ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯:১৫

চট্টগ্রামে দিনদুপুরে প্রকাশ্য গুলি করে ব্যবসায়ীকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৫)। তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশকে গুলি করে পালিয়েছেন তিনি। 

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ সিএনজি পেট্রল পাম্পের পাশে ইউনুস টাওয়ার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন- চান্দগাঁও থানার এএসআই ফায়াজ আহমেদ ও এএসআই রাজু আহমেদ। গুলিবিদ্ধ অপর দুইজন হলেন- ভবনটির বাসিন্দা মো. জাবেদ (৩৮) ও সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরী কাজল দে (৪০)।  জাবেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ও কাজলকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দুই পুলিশ সদস্য নগরীর দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর অক্সিজেন মোড়ের ইউনুস টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে সাজ্জাদ হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ভোর ৪টার দিকে নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অভিযান চালায় বায়েজিদ বোস্তামী থানা ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে সাজ্জাদ। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছুড়ে। উভয়পক্ষের গুলি বিনিময়ে জাবেদ ও কাজল দে গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশ সদস্য ফায়াজ ও রাজুও। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। পুলিশও পিছু হটে।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে চারজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে সাতটি পিস্তলের গুলির খোসা ও একটি রাবার বুলেটের খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

কে এই সাজ্জাদ   

চট্টগ্রামের এক সময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এই আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় এখনও কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে হামলা করেন। দুই দশকের বেশি এভাবেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন সাজ্জাদ। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে নুরুন্নবী ম্যাক্সন ভারতে গিয়ে মারা গেছেন। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট ঢাকাইয়া আকবর। সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা পক্ষ ত্যাগ করে বাহিনী গড়েছেন, ফলে হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির জামালের ছেলে ছোট সাজ্জাদকে শিষ্য হিসেবে গড়ে তোলেন বড় সাজ্জাদ।

বর্তমানে নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার দখল নিয়ে লড়াই চলছে ছোট সাজ্জাদ ও বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গত ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালান সাজ্জাদ। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারো আলোচনায় আসে। দেড়মাস পার হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে উল্টো আহত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

×