কক্সবাজার সৈকতের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের স্থায়ী ও অস্থায়ী সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।। ছবি: সমকাল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:১৬
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের স্থায়ী ও অস্থায়ী সব স্থাপনা একদিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শনিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে বসানো ঝিনুক মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এ নির্দেশ দেন।
এসময় দোকানের মালিক ও হকারদের নিজ দায়িত্বে মালামাল সরিয়ে নিতে মাইকিং করে এই আহ্বান জানান ইউএনও।
অভিযানের বিষয়ে নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টের আদেশে সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশনা রয়েছে। এ আদেশ অনুযায়ী সৈকতের দখল ছেড়ে দিতে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করছেন জানিয়ে ইউএনও বলেন, তারা এরই মধ্যে অস্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত অন্তত ৫০০ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কক্সবাজার শহরের সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বালিয়াড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক দোকান। এই পয়েন্টের সড়ক ও ফুটপাতেও বসানো হয়েছে আরও শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান। এর দক্ষিণপাশে কলাতলী পয়েন্টের সি ক্রাউন হোটেলের সামনে তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি দোকান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানার পর নিজ উদ্যোগে এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার পর্যটন এলাকার জন্য ৩০ বছর (২০১১-৪১) মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১৩ সালের মে মাসে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কক্সবাজার পৌরসভা এলাকার সৈকতসংলগ্ন প্রথম ৩০০ মিটারের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। পরবর্তী ৩০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ করা যাবে সাড়ে ছয় মিটার উঁচু বা দোতলা ভবন। তবে নির্দেশনা লঙ্ঘন করে সৈকতে এসব বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও সরকার কক্সবাজারের সৈকত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। এই গেজেট অনুযায়ী সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নিষিদ্ধ। পাশাপাশি এ পয়েন্টের পরিবেশগত সংকটাপন্ন স্থানে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে রাতারাতি নির্মিত শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করতে তিন সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১২ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। গত ১ ডিসেম্বর বেলার পক্ষে এ নোটিশ পাঠান আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা।
নোটিশে সৈকতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৈকত সংরক্ষণের জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র তীরবর্তী উন্নয়ন নিষিদ্ধ জোনের ৩০০ মিটার ও পৌরসভাবহির্ভূত নিয়ন্ত্রিত জোনের ৫০০ মিটার এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃক্ষরোপণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে বেলার আইনজীবীকে পদক্ষেপ জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
- বিষয় :
- কক্সবাজার
- সমুদ্র সৈকত