ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জীবনের রঙ্গমঞ্চে নিভু নিভু আলো

জীবনের রঙ্গমঞ্চে নিভু নিভু আলো

তারাপদ কর্মকার

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৪৩

সত্তর দশকের যাত্রাপালার মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা তারাপদ কর্মকার। যাত্রার মঞ্চে অভিনয় করে হাজার হাজার দর্শকের মন জয় করলেও শেষ বয়সে এসে তিনি দারিদ্রের কাছে পরাজিত।
তারাপদ (৭২) শুধু অভিনয় শিল্পীই নন। একাধারে তিনি যাত্রা দলের মালিকও ছিলেন। যাত্রার স্বর্ণযুগে তারাপদের অগ্রগামী নাট্য সংস্থায় ছিল ৭৫ জনের মতো। সবার খরচ চলত দলের আয় থেকে। সে সময়ের যাত্রা দলের মালিক এখন বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছেন। ছেলে মিটুল কর্মকারের ছোট চায়ের দোকন থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলছে ছয় সদস্যের সংসার। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েই চলছে খ্যাতিমান এই যাত্রা শিল্পীর জীবন।
তারাপদ কর্মকার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার সকালে কথা হয় তারাপদ ও তাঁর বড় ছেলে মিটুলের সঙ্গে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সবসময় বিছানায় থাকতে হয় তারাপদকে। তিন শতক জমির ওপর টিনের ছোট ঘরের একটি কক্ষে কাটছে তাঁর জীবন। স্পষ্ট করে বলতে পারেন না কথা। এরপরও চেষ্টা করেন অতীতের স্মৃতি স্মরণ করতে। অস্পষ্ট ভাষায় শোনাতে চান তাঁর যৌবনের সোনালি দিনের গল্প।
তারাপদের বড় ছেলে মিটুল কর্মকার জানান, তারা সবাই যাত্রাপালার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অগ্রগামী নাট্য সংস্থা নামে তাদের সরকারি অনুমোদিত একটি যাত্রা দল ছিল। সেখানে ৭৫ জনের মতো শিল্পী ও কলাকুশলী ছিলেন। তাঁর মা রেনুকা কর্মকার ও বাবা দু’জনই যাত্রা শিল্পী। তিনি নিজেও বাদ্যযন্ত্র শিল্পী। তাঁর স্ত্রী লক্ষী কর্মকার প্রিন্সেস (নায়িকা) ছিলেন। একসময় তাদের সুখের সংসার ছিল। যাত্রা শিল্পে ধস নামলে তাদের জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার।
মিটুল আরও জানান, ছোট বসত বাড়িটি ছাড়া তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই চলতে হয়। তাঁর বাবা ২০০৬ সালে স্ট্রোক করেন। সেই থেকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হয় তাঁকে। তাঁর যে ওষুধের প্রয়োজন সেটা তিনি মেটাতে পারছেন না। বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সহযোগিতা পান না তিনি। যাত্রা শিল্পী হিসেবেও মেলেনি কোনো সম্মাননা। তবে বেশ কয়েক মাস আগে তিনি সমাজসেবা অফিসে আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। 
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি সুজয় কুমার পাল বলেন, বাঙালি জীবনের একটি গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যাত্রাপালা। প্রশাসনিক জটিলতা, ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন আর আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিচরণের ফলে ধ্বংসের মুখে দেশীয় যাত্রা শিল্প। এতে সম্পৃক্ত মানুষগুলোও এখন নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরগুলোর উচিত তাদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া।
জেলা কালচারাল কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম দাস জানান, শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাত্রা শিল্প রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনো নিবন্ধিত দল যাত্রা করার অনুমতি চায়, সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
 

আরও পড়ুন

×