ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চিরকুট লিখে মিটার চুরি

চিরকুট লিখে মিটার চুরি

ছবি: সমকাল

নাটোর ও জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৫:৫০

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বৈদ্যুতিক মিটার চুরি বেড়েছে। চোর রাতে মিটার খুলে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় লিখে রেখে যাচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর। সেই নম্বরে কল করা হলে চাওয়া হচ্ছে টাকা। পরে দরকষাকষি করে টাকা পাঠিয়ে ভুক্তভোগী কেউ কেউ মিটার ফেরত পাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রাতেও পাকা ইউনিয়নের লোকমানপুর বাজার থেকে ৪টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। 

ভুক্তভোগীরা জানান, চোর চক্র গভীর রাতে চুরি করে নিয়ে যাওয়া মিটারের পাশে পলিথিনে মুড়িয়ে রেখে যাচ্ছে চিরকুট। তাতে লেখা থাকছে, ‘চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেতে ফোন করুন ০১.....এই নম্বরে।’ চিরকুটে থাকা নম্বরে কল করলে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা পাওয়ার ১৫ মিনিট পর তারা মিটার পৌঁছে দেয়।
ভুক্তভোগী আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে মিল বন্ধ করে বাড়ি যাই। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মিলে এসে দেখি মিটার নাই। জানতে পারি বাজারের আরও তিনজনের মিটার চুরি হয়েছে। মিটারের চোর চিরকুটে মোবাইল নম্বর লিখে রেখে গেছে। নম্বরটিতে কল দিলে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। আমি গরিব মানুষ এত টাকা কীভাবে দেব বুঝতে পারছি না।’

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের কাছে ৭ হাজার টাকা দাবি করা হয়। দরকষাকষি করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। ১৫ মিনিট পরে মিটার পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে চোরেরা। নির্ধারিত সময়ে পাশের বাড়ির খড়ির ঘরে মিটার পাওয়া যায়। চোর চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এ কাজ করছে। তারা প্রশাসনের কাছে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। 

নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগাতিপাড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ওঅ্যান্ডএম) মঞ্জুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এফআইআর করে কপি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিলে পরের দিনই মিটার সংযোগ দিয়ে দেবেন।

মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট মাঠ থেকে মঙ্গলবার রাতে তিনটি গভীর নলকূপের মিটার চুরি হয়েছে। রাতেই পুলিশকে জানানো হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। প্রতিবাদে বুধবার সকালে নলকূপের মালিক ও কৃষকরা জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। ঘণ্টাব্যাপী চলা কর্মসূচির কারণে মহাসড়কের দু’পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

অবরোধে আটকে পড়া ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী শাহ আলম বলেন, এক ঘণ্টা ধরে এখানে আটকে আছি। আন্দোলনের কারণে গাড়ি নড়ে না। ঢাকায় বিকেল ৪টার মধ্যে না পৌঁছাতে পারলে ক্ষতি হয়ে যাবে। 

নলকূপ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলু সেচের মৌসুম চলছে। কৃষকরা মাঠের মধ্যে গভীর ও অগভীর নলকূপে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে সেচের কাজ সারছেন। মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে শীতের রাতে মাঠে রাত যাপন করছেন। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না চোর চক্রকে। চুরির পর থানায় জানালেও পুলিশ এ পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মঙ্গলবার রাতেও পুনট পূর্বপাড়া মাঠ থেকে শাহজাহান আলী, সরদারপাড়া মাঠ থেকে আজিজার রহমানসহ তিনজনের গভীর নলকূপের মিটার ও সিভার তার চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। রাতে পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। পুলিশের এ ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তারা জানান, চোরেরা যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার রেখে যায়। সেই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে টাকা দিলেই মিটার ফেরত পাওয়া যায়। পুলিশকে এসব ফোন নাম্বার দেওয়া হলেও কোনো চোর গ্রেপ্তার হয় না। 

চুরি যাওয়া মিটারের মালিক শাহজাহান আলী বলেন, রাতে নলকূপের ঘরেই ছিলাম। কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কখন যে চোরেরা এসে মিটার নিয়ে গেছে টের পাওয়া যায়নি। রাত দেড়টার দিকে পুলিশকে ফোন করে বলার পরও তারা আসেনি। এ জন্য মালিক ও কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। 

ভুক্তভোগী মিটার মালিক আজিজার রহমান বলেন, মিটার চুরির পর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে নতুন করে আবেদন করতে হয়। এতে অতিরিক্ত টাকার পাশাপাশি ঝামেলা পোহাতে হয়। গভীর নলকূপ স্থাপন শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কালাই জোনাল অফিসের ডিজিএম হামিদুল হক বলেন, প্রতিনিয়ত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরি রোধে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত সচেতন করা হচ্ছে। মাইকিংও চলছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×