জলমহাল ইজারা কাগজে-কলমে অধিকার নেই জেলের

ফাইল ছবি
এম এ এরশাদ, ডুমুরিয়া (খুলনা)
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫১
খাদ্য ও মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত খুলনার ডুমুরিয়া। নদী-খাল বেষ্টিত এ উপজেলার ৮৫ ভাগ লোক মাছ চাষ, মাছ ধরা ও মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু কতিপয় অমৎস্যজীবী প্রভাবশালীর দখলে উপজেলার অধিকাংশ নদী-খাল। এতে জলমহালগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা।
উপজেলায় ছোট-বড় ১৩৬টি নদী-খাল রয়েছে, যা সরকারি জলমহালের আওতায়। এসব নদী-খালে মাছ শিকারের জন্য প্রতিবছর জেলেরা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে একসনা ইজারা নেন। সরকারি জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী, নদী-খালে স্থায়ীভাবে মাছ চাষ করা যাবে না। নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এমন বাঁধ দেওয়া বা দ্বিতীয় কোনো পক্ষকে
সাব-লিজ (সহ-ইজারা) দেওয়া যাবে না। অথচ স্থানীয় প্রভাবশালীরা উপজেলায় অধিকাংশ নদী-খাল ইজারা বা দখলে নিয়ে সেগুলোতে সহ-ইজারাদার নিয়োগ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। অধিক মুনাফার জন্য নদী-খালের একাধিক স্থানে আড়াআড়ি বাঁধ ও নেট পাটা (বেড়া) দিয়ে খণ্ড খণ্ড জলাশয় তৈরি করেছেন।
উপজেলার ধামালিয়া, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা, খর্নিয়া, আটলিয়া, মগুরাঘোনা, শোভনা, শরাফপুর, সাহস, ভান্ডারপাড়া, ডুমুরিয়া সদর, রংপুর, গুটুদিয়া ও মাগুরখালী ইউনিয়নের নদী-খালে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিলশলুয়া জলমহাল, সীতামারী, কোড়াকাটা, থিয়া খাল, বাঁশচাত্র খাল, নিচুখালী, নাথের কুড়, মাধবকাটি, হাতিটানা, গোলাবদোহা, বেতাটানা, বালিয়ার খাল, বাদুরগাছা, ওড়াবুনিয়া, বয়ারশিং, বিলপাবলাসহ প্রায় সব নদী-খাল ও জলাশয় স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। এসব নদী ও খালে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। এতে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা
মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর, আবাদি ফসল, সবজি ক্ষেত ও মৎস্য খামার।
ডুমুরিয়ার জেলে সম্প্রদায়ের নিখিল বিশ্বাস, রুদাঘরার পংকজ বিশ্বাস ও রংপুর শলুয়া গ্রামের অমল বিশ্বাস বলেন, নদী-খালগুলো এখন আর জেলেদের হাতে নেই। প্রাকৃতিক মাছ শোল, টাকি, টেংরা, পাবদা, মাগুর, জিয়াল, বোয়াল, পুঁটি, কৈ, গজাল, রয়না দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষেত্র দখল হয়েছে গেছে। জেলেদের হাতে জলমহাল এখন কাগজে-কলমে দেখা যায়। বাপ-দাদার
পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন তারা। নদী-খালগুলো ইজারা না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।
সরকারি খালের ইজারাগ্রহীতা আব্দুল লতিফ মোড়ল অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছর ভূমি অফিস মাত্র ১৫টি খাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ইজারা দিয়েছে। এ ছাড়া ৬১টি খাল খাস আদায়ে ইজারা দিয়েছে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এসব খালের মধ্যে তিনি ১১টি খাল ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু খালগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় তিনি একটি খালও দখল বুঝে
পাননি। এ ছাড়া উপজেলায় আরও ৬০টি খাল অবৈধ দখলে আছে। এতে সরকার মোটা অঙ্কের টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, উপজেলার নদী-খাল দখলমুক্ত করতে কাজ চলছে। এ কাজে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। সরকারি খাল ও নদী উন্মুক্ত করার বিষয়ে রোববার এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নদী-খালের দখল ছেড়ে দিতে দখলদারদের ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- জলমহাল দখল