বাসে হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী হয়রানি

ফাইল ছবি
শরীফ উদ্দিন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৪৫
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসে বিশেষ সুবিধা (হাফ ভাড়া) পেতে শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি বাসে দু-তিনজনের বেশি ছাত্রছাত্রী উঠতে দেওয়া হয় না। শুক্র-শনিবার এবং সন্ধ্যা ৭টার পরে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। নগরীর ২ নম্বর রেলগেট কাউন্টার থেকে শিক্ষার্থীদের তোলা হয় না। সাইনবোর্ডে শিক্ষার্থী দেখলে বাসই থামানো হয় না। এ ছাড়া পরিচয়পত্র পরীক্ষার নামে ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ঢাকার গুলশানের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, শিক্ষার্থী বলার পরে তাঁর পরিচয়পত্রটা কমপক্ষে দশ মিনিট ধরে চেক করে ধমকের সুরে কাউন্টারের লোকজন লাইনে যেতে বলে। শিক্ষার্থী টিকিট কাউন্টারে না দিয়ে আলাদা দেয়। অথচ এটা কাউন্টারেই দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী তূর্ণা রায় জানান, অ্যাপ্রোন পরা থাকলেও কন্ডাক্টররা পরিচয়পত্র অনেকক্ষণ ধরে চেক করে। শিক্ষার্থী দেখলে তারা খুবই বাজে আচরণ করে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু তারা শুক্র ও শনিবার হাফ ভাড়া নিতে চায় না। নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে একটি বাসে দু-তিনজন শিক্ষার্থী উঠলে আর উঠতে দেয় না। পরের বাসে আসতে বলে। পরের বাসে উঠতে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দেরি হয়ে যায়।
ঢাকার ডেমরার শামসুল হক খান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রী ফাবিহা জান্নাত বলেন, চিটাগাং রোড থেকে ছাড়ে রজনীগন্ধা আর মদনপুর থেকে ছাড়ে মেঘলা। সে এই দুই বাসে শাহবাগ যায় মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে। সাইনবোর্ড থেকে ওঠে। কিন্তু পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানো দেখলে বাসই থামানো হয় না।
ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র সাইদুর রহমান জানান, তাঁর বাসা দেওভোগে। বাসা থেকে ২ নম্বর রেলগেট হাঁটা পথ। কিন্তু এখানে বাসে উঠতে চাইলেই বলা হয়, ছাত্রদের বাস টার্মিনালে গিয়ে উঠে আসতে হবে। অথচ এখানে অন্য যাত্রীদের বাসে তোলা হয়। আবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই ছাত্রদের ভাড়া নিয়ে গড়িমসি শুরু হয়ে যায়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রওশন আলী সরকার বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র যখন তারা পরীক্ষা করতে যান, তখন তারা বিরক্ত হয়। চালক, তাঁর সহযোগী, লাইনম্যান, কাউন্টারম্যান যারা এই কাজগুলো করে তারাও বেশির ভাগ অশিক্ষিত। তারা ঠিকমতো আচরণ করতে জানেন না, এটা সত্য। তবে অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজের পোশাক পরে আসেন না, একজন পরিচয়পত্র দেখিয়ে পরিচয়পত্রহীন বন্ধুবান্ধবীকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের লোকজন বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হন– এমন ঘটনাও আছে।
রওশন আলী সরকার বলেন, একটা বাসে তারা পাঁচজনের বেশি ছাত্রছাত্রী তুলতে পারেন না। কারণ, কোম্পানি হলেও যাত্রীর হিসাব প্রত্যেকের আলাদা। যাত্রীর হিসাবে তারা দিন শেষে খরচ বাদ দিয়ে ভাড়া পায়। তিনি বলেন, পরের বাসে যেতে বললে একটু অপেক্ষা করে ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া উচিত। কারণ, প্রতি ৩-৪ মিনিট পরপর তাদের বাস আছে। শুক্র-শনিবার ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এমনিতে সাধারণ ধারণা যে শুক্র-শনিবার স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। ছাত্রছাত্রীদের এসব অভিযোগ বাস মালিকদের সঙ্গে সভা করে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
নগরীর ২ নম্বর রেলগেট থেকে ছাত্রছাত্রীদের তোলা হয় না– এ অভিযোগ প্রসঙ্গে রওশন আলী সরকার বলেন, টার্মিনালে যখন বাসে পাঁচজন শিক্ষার্থী ওঠে তখন ২ নম্বর রেলগেট থেকে আর ছাত্রছাত্রী তোলা যায় না। তবে এ বিষয়টি ও সন্ধ্যা ৭টার পরে হাফ ভাড়া না নেওয়ার বিষয়টিসহ শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক মুন্নি সর্দার বলেন, বাস ভাড়া কমানোর আন্দোলনের দুটি বিষয় ছিল। বাস ভাড়া কমানো ও শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া। বাস ভাড়া কমানোর দশ-বারো দিন পরে আন্দোলনের মুখে বাস মালিকরা হাফ ভাড়ার বিষয়টি মেনে নিলেও তারা এটি নিয়ে এখানও ব্যাপক গড়িমসি করছে। ছাত্রদের হয়রানি করছে। বছরের পর বছর তারা নারায়ণগঞ্জের গডফাদারকে চাঁদা দিয়ে গেছে, এতে তাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু ছাত্রদের হাফ পাসের বিষয়টি এলেই তাদের মানতে কষ্ট হয়। এ রকম আচরণের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায় বাস মালিক ও শ্রমিকদেরই নিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীরা এসব ব্যাপারে তাঁকে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।
- বিষয় :
- বাস ভাড়া