হামলা ও মারধরে আহত বিএনপির ১৭ নেতাকর্মী

শাহজাদপুরে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীর হামলায় জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম সারোয়ারসহ ১৫ জন আহত হন
রাজশাহী ব্যুরো, সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর ও ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২:২৮
রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পাবনার ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিপক্ষ ও দুর্বৃত্তদের হামলায় বিএনপির অন্তত ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই স্থানে প্রতিপক্ষের হামলা এবং এক স্থানে দুর্বৃত্তদের মারধরের শিকার হয়েছেন তারা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীর হামলায় জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম সারোয়ারসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার পৌর শহরের মনিরামপুর বাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুরের দিকে গোলাম সারোয়ার ২০-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যান। এ সময় আগে থেকে অবস্থান নেওয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ড. এম এ মুহিতের সমর্থকদের সঙ্গে কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ে তাদের বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে গোলাম সারোয়ারসহ তার কমী-সমর্থকদের ধাওয়া দেয় এবং মারধর করে তারা। এতে অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
তাৎক্ষণিক নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে গোলাম সারোয়ার অভিযোগ করে বলেন, এম এ মুহিতের সমর্থকরা লাঠিসোটা, হকিস্টিক, রড ও পাইপ নিয়ে তাদের মারধর করেছে। পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মুহিতের সমর্থক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, শাহজাদপুরের রাজনীতিতে গোলাম সারোয়ারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপজেলা নেতাকর্মীর না জানিয়ে হঠাৎ দলীয় কার্যালয়ে আসায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে প্রতিহত করেছেন।
উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম চৌধুরী সাকিক বলেন, গোলাম সারোয়ার শাহজাদপুরে সক্রিয় না থাকলেও শনিবার হঠাৎ দলবল নিয়ে দলীয় কার্যালয় দখলের পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি সাধারণ নেতাকর্মীরা মেনে নেননি।
উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ন কবির বলেন, গোলাম সারোয়ার ও তার পরিবার সুবিধাবাদী। দুঃসময়ে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন না। তাদের নিয়ে হঠাৎ শাহজাদপুরে আগমন করার উদ্দেশ্য অন্য কিছু।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন উপলক্ষে কর্মী সমাবেশে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়ালসহ তার অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, রাজশাহী-১ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ উদ্দীনের অনুসারীরা এ হামলা করেছে।
ভুক্তভোগী আবদুস সালাম শাওয়াল জানান, শনিবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে জিয়া ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারুল সরকারকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেটকারে সমাবেশে যাচ্ছিলেন। তারা বারো মাইল এলাকায় পৌঁছালে ১০ থেকে ১৫ জন লাঠিসোটা ও রোড নিয়ে হামলা করে।
এ সময় তারা গাড়িতে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে। এতে আবদুস সালাম মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ উদ্দিন বারবার তাদের ওপর হামলা করছেন। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করায় হামলা হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। সবাই তো আমার গ্রুপের। কে কার ওপর হামলা করল? খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, বিএনপি নেতার গাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে।
ঈশ্বরদীর পাকশীতে আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩৫) নামে বিএনপির এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার পাকশীর রূপপুর বিবিসি বাজারসংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আরিফ পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নতুন রূপপুর গ্রামের বিএনপি নেতা আশরাফ আলীর ছেলে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে বিবিসি বাজারের কাছে তাকে মারধর করে কয়েকজন। কী কারণে মারধর করা হয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।