ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী

ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ডিঙ্গাপোতা হাওরে ডুব সড়ক নির্মাণকাজ চলছে সমকাল

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:১০

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ডিঙ্গাপোতা হাওরে নির্মিত ডুবো সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া থেকে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ভেতর দিয়ে গাগলাজুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়কে আরসিসি ঢালাই করা হবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না– অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর সড়কের তেঁতুলিয়া থেকে গাগলাজুর বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ডুবো সড়ক প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য সড়কটিতে আরসিসি ঢালাই করা হবে। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি এ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা চুক্তি মূল্যে এ কাজ পায় এমএস বিল্ডার্স নামে কুমিল্লার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জের মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীম নামে একজন ঠিকাদার। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এত দিনে ১০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গাপোতা হাওরের ধান পরিবহনে কৃষকদের জন্য এ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সড়কপথে গাগলাজুর বাজার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পরিবহনে সড়কটির গুরুত্ব অনেক। এদিকে খালিয়াজুরী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বেশ কিছু এলাকার মানুষ নৌপথে গাগলাজুর বাজারে এসে সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য বিশাল ব্যয়ে সরকার আরসিসি ঢালাই বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ময়লা মিশ্রিত বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট ও অপর্যাপ্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করছেন। ইট গাঁথুনির পর এতে ঢালা হচ্ছে না পানি। যে কারণে বছর পেরোনোর আগেই সড়কটি ভেঙে যাবে। বরাদ্দ লুটপাট হবে, কৃষকের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। এ ছাড়া ধীরগতির কারণে চলতি শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ না হলে সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে হাওর এলাকার মানুষের।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, ময়লা মিশ্রিত বালু, অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কের গাইড ওয়ালের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। অপর্যাপ্ত পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে। জানতে চাইলে নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, হাওরে পানি পাওয়া যায় না। তাই কম পানিতেই বালু-সিমেন্ট মেশানো হচ্ছে।
মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের খোকন মিয়া ও আবদুল হাসেম জানান, হাওরের ফসল ঘরে তোলা ও যোগাযোগের জন্য এই সড়কই একমাত্র ভরসা। ময়লা মেশানো বালু, নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট দিয়ে যেনতেনভাবে সড়কে কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। নামমাত্র পানি দিয়ে বালু-সিমেন্ট মিশিয়ে ইটের গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে যেতে পারে সড়কটি।
গাগলাজুর গ্রামের হাসান মিয়া বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম রোধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের টাকা জলে যাবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মফিদুল ইসলাম ওরফে ওয়াসীমের ভাষ্য, ভালো ইটের সঙ্গে কিছু নিম্নমানের ইট মিশিয়ে দিয়েছিল ভাটার লোকজন। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী পরীক্ষা করে বেশ কয়েক হাজার ইট বাতিল করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে রেডিমিক্স মেশিনসহ বেশ কিছু মেশিন বসিয়ে নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এলজিইডি অফিসের লোকজনের সামনেই কাজ চলছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সোয়াইব ইমরান বলেন, কাজে অনিয়ম বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সাইট থেকে নিম্নমানের ইট অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বালুসহ নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করা হয়েছে। গাইড ওয়াল কিছুটা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করানো হয়েছে। এখন তদারকি বাড়ানো হয়েছে। শুকনো মৌসুমেই কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
 

আরও পড়ুন

×