ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

এআই’র তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন সুলতানা, দাবি স্বজনের

এআই’র তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন সুলতানা, দাবি স্বজনের

সুলতানা পারভীন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯:৩৪ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২০:২৫

দশ মাস আগে জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়। দু’মাস পরই স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। প্রবাসে সোনার সংসার গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর নববধূর জীবন তছনছ করে দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে বানানো একটি ভুয়া ভিডিও। ওই রমণী বেছে নেন আত্মহননের পথ। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভীনের জীবনে। গত রোববার দুপুরে বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আত্মহত্যার পর  এমনটাই দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

 এদিকে মৃত্যুর আগে লিখে যান তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। স্বামী অনিকের বোন জামাই পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ মৃদুলকে দায়ী করে সুলতানা লেখেন, ‘মৃদুলকে ছেড়ে দিও না, ওর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ওকে ছেড়ে দিও না। আমার সংসার, অনিক, কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারলাম না।’  

গতকাল মঙ্গলবার সুলতানাদের বাড়ি গেলে দেখা যায়, মা ফিরোজা বেগম বাকরুদ্ধ। কোস্টগার্ডে কর্মরত একমাত্র ভাই আলিমুল ইসলাম আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছি। অথচ আমার পরিবারে নিরাপত্তা নেই। ওরা সবাই মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ফেক আইডি থেকে অনিকের পর্তুগালপ্রবাসী বোন জামাই মৃদুল আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি প্রথমে সুলতানাকে, পরে তাঁর স্বামী অনিককে পাঠানো হয়। এই ভিডিওর কারণে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। অনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি ডির্ভোস দেবেন বলেও হুমকি দেন। পরে জানা যায়, ভিডিও এআই দিয়ে তৈরি।
 
মা ফিরোজা বেগম বলেন, সবাই মিলে মেয়েটাকে হত্যা করেছে। অনিক, অনিকের মা, বোন জামাই মৃদুলের ফাঁসি চান তিনি। দু’এক দিনের মধ্যে থানায় মামলা করব। 
জাপানপ্রবাসী অনিকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ভগ্নিপতি মৃদুলের সঙ্গে আমার স্ত্রীর বচসা হয়। সুলতানা কীভাবে সংসার করে, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মৃদুল। তার কারণে আমাদের সংসারে অশান্তি হয়। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সুলতানা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি। 

পর্তুগালপ্রবাসী মৃদুল বলেন, অনিকের সঙ্গে অন্য একটি মেয়ের সম্পর্ক আছে। পরিবারের চাপে সে সুলতানাকে বিয়ে করে। বিয়ের দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা পরিশোধ না করতে সে এই নাটক সাজিয়েছে। ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার আইডিতে ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি আসে। সেটি আমার স্ত্রীকে দেখিয়েছি। এরপর অনিক ও তার পরিবার সুলতানার ওপর মানসিক অত্যাচার চালায়। তদন্ত করলেই আসল ঘটনা বের হবে।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আকবর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×