ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

‘সমন্বয়ক’ পরিচয় শুনে বেশি মেরেছে

‘সমন্বয়ক’ পরিচয় শুনে বেশি মেরেছে

খুলনায় নির্যাতনের শিকার কমার্স কলেজের ছাত্র তারেক মোল্লা সমকাল

 খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:০৮

খুলনায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় শুনে যৌথ বাহিনী বেশি মেরেছে বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্র। ভুক্তভোগী তারেক মোল্লা আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র। ছিলেন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক। বর্তমানে কমার্স কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ৪ এপ্রিল রাতে যৌথ বাহিনী তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তখন এক পুলিশ সদস্য বলছিলেন, ‘৫ আগস্টের পর দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিস। এখন আমরা মারব, আ’লীগ মারবে, বিএনপিও মারবে।’
গত দু’দিন শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর ঘাট এলাকায় ওবায়দুল নামের এক শ্রমিকের মোটরসাইকেল চেক করা হচ্ছিল। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক হয়। পরে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে পুলিশ-শ্রমিক উভয় আহত হন।
গভীর রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তাঁকে না পেয়ে ছেলে তারেক, কিশোর নাতি হৃদয় হাওলাদার এবং ওবায়দুলের ভাই শহিদুল হাওলাদারকে আটক করে। এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক এবাদ আলী মামলা করেন। মামলায় তারেককে ১ নম্বর, নাতিকে ৩ নম্বর এবং তালেবকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়। ৬ এপ্রিল জামিন পেয়েছেন তারেক ও হৃদয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে মামুর মাজারে মোটরসাইকেল চেক করা হচ্ছিল। অজ্ঞাতনামা তিন আসামি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। পরে তারা অন্যান্য আসামিকে সঙ্গে নিয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চায়। বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দেশি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয়।
তারেক বলেন, ‘গভীর রাতে হঠাৎ আমাদের বাড়িতে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে। আমাকে ও ছোট ভাগনেকে ঘুম থেকে তুলে মারধর শুরু করে। এর মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেন সদর থানার দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা নান্নু মণ্ডল। তিনি অন্যদের বলেন, এ তো সমন্বয়ক। এর পর ভাগনেকে রেখে সবাই আমাকে পেটানো শুরু করেন।’
শরীরের এক পাশে দগদগে ক্ষত দেখিয়ে বলেন, ‘ঘাটে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় বাবাকে খুঁজতে এসেছিল পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়।’
গতকাল ঘাট এলাকায় গেলে শ্রমিকরা জানান, তালেব মোল্লার ছেলে-নাতি কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
সেই মোটরসাইকেলের মালিক ওবায়দুল হাওলাদার বলেন, ‘ওই দিন তারেক, হৃদয় কেউই মারামারিতে ছিল না।’
মামলার বাদী ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এবাদ আলী বলেন, ‘নৌবাহিনী সদস্যরা ধরার পর ওই সময় সে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছে মারামারিতে ছিল। আমাদের দেশের নিয়ম তো এমনই, পরে অস্বীকার করে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, ‘এ নির্যাতনে জড়িত সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে উপপরিদর্শক নান্নু মণ্ডল বলেন, ‘অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিল নৌবাহিনী। মামলা করেছে ডিবি। আমি তারেককে চিনি না।’
সচেতন নাগরিক কমিটি খুলনার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, একজনের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ।

আরও পড়ুন

×