ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

এক বছরেই মিষ্টিকুমড়ার দাম অর্ধেক

এক বছরেই মিষ্টিকুমড়ার দাম অর্ধেক

ট্রাকে তোলা হচ্ছে মিষ্টিকুমড়া। সামনে পড়ে আছে পচা কুমড়া। বুধবার ইটনার বড়িবাড়ি হাওরে সমকাল

মোস্তফা কামাল, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:৩৪

মো. লেনিনের আড়াই একর জমিতে এবার মিষ্টিকুমড়া হয়েছে প্রায় ২৫০ মণ। গত বছরও তিনি প্রতিটি কুমড়া বিক্রি করেছেন ১৮-২০ টাকায়। এবার দাম পাচ্ছেন ৮-১০ টাকা করে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি হাওরের এই কৃষক। একই হাওরের অন্য কৃষকের অবস্থাও ভিন্ন নয়। তাদের অনেকের জমিতে পড়ে আছে পচে যাওয়া মিষ্টিকুমড়া।
বুধবার বড়িবাড়ি হাওরে তাজা মিষ্টিকুমড়ার স্তূপ দেখা যায়। পাশেই ফেলে রাখা অসংখ্য পচা মিষ্টিকুমড়া। চাষিরা জানিয়েছেন, বিপুল পরিমাণ মিষ্টিকুমড়া তাদের এবার বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে। স্থানীয় পাইকাররা এসব কিনে অন্য জেলায় সরবরাহের জন্য ট্রাকে তুলছেন। 
কৃষক লেনিনের কথা, এবার দরপতনের কারণ কিছুটা বোঝা গেল। তিনি বলেন, এবার সব ধরনের শাকসবজির দামই অনেক কম ছিল। রোজা চলার মধ্যেই তাঁর জমির মিষ্টিকুমড়া আহরণের উপযোগী হয়। কিন্তু তখন বাজারে চাহিদা ছিল না বললেই চলে। এসব কারণ দেখিয়ে পাইকাররা এখন আগের দামে মিষ্টিকুমড়া কিনতে চান না। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁর মতো সব কৃষক।
একই এলাকার কৃষক বিল্লাল মিয়ার কণ্ঠেও হতাশার সুর। সামান্য জমিতে প্রায় ৫০ মণ মিষ্টিকুমড়া ফলিয়েই বিপাকে পড়েছেন। বিক্রি করতে গিয়ে গতবারের অর্ধেক দাম পাচ্ছেন। 
লেনিনের ক্ষেত থেকে মিষ্টিকুমড়া কেনেন স্থানীয় পাইকার গোলাম কিবরিয়া। তিনি এবার ১০ টন মিষ্টিকুমড়া কিনেছেন। সেগুলো শ্রমিকের সহায়তায় ট্রাকে তুলছিলেন। গোলাম কিবরিয়ার ভাষ্য, কিশোরগঞ্জে যে পরিমাণ মিষ্টিকুমড়ার ফলন হয়, তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা যায় না। প্রতি বছরই ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকেন। এবারও টাঙ্গাইলের আড়তে পাঠানোর জন্য তিনি ১০ টন কিনেছেন। 
এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, কৃষিপণ্যের দাম বেশি থাকলে কৃষকের যেমন লাভ হয়, ব্যবসায়ীদেরও ভালো লাভ হয়। এবার দাম এত কমে গেছে, লাভের হারও স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।
বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ মিষ্টিকুমড়া দৃষ্টিশক্তির জন্য, বিশেষ করে রাতকানা রোগীদের জন্য উপকারী। এসব তথ্য জানিয়ে জেলা খামারবাড়ির সহকারী উপপরিচালক (শস্য) মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানি এবার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে মিষ্টিকুমড়ার প্রচুর আবাদ করিয়েছে। এতদিন কৃষক ভালোই দাম পাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছর, বিশেষ করে রবি মৌসুমে শাকসবজির প্রচুর ফলন হওয়ায় দামও পড়ে যায়। মিষ্টিকুমড়া আহরণের সময় রোজার মাস ছিল। বাজারে সরবরাহের তুলনায় বিক্রি খুবই কম হয়। এসবেরই প্রভাব পড়েছে মিষ্টিকুমড়ায়। তাই কৃষকরা প্রত্যাশা মতো দাম পাচ্ছেন না। ফলে অনেকে পরিপক্ব মিষ্টিকুমড়া জমিতে ফেলে রাখছেন। মাটির সংস্পর্শে এসব মিষ্টিকুমড়া পচে গেছে।
শাহীনুল ইসলামের ভাষ্য, স্থানীয়ভাবে ছয় মাস পর্যন্ত পরিপক্ব মিষ্টিকুমড়া সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এবার বিপুল উৎপাদিত মিষ্টিকুমড়া রাখারও উপায় নেই কৃষকদের। কিশোরগঞ্জেও এ সবজি সংরক্ষণের হিমাগার বা বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

আরও পড়ুন

×