রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আশুগঞ্জের যুবক নিহতের খবর, পরিবারে কান্না

বাড়ির সামনে আহাজারি করছেন নিহত আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া
আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২০:১৯ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২০:৪৩
রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার এক তরুণের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার এক সহযোদ্ধা মুঠোফোনে পরিবারকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সহযোদ্ধার বরাত দিয়ে ওই যুবকের পরিবার জানিয়েছে, যে স্থানে সেখানে নিহত হয়েছে, সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
জানা যায়, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন হোসেনপুর গ্রামের মো. মোরশেদ মিয়ার ছেলে মো. আকরাম হোসেন। আকরামের এক সহযোদ্ধার ফোনে এ খবর জানার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিহতের স্বজনদের মাঝে চলছে মাতম। তারা নিহতের লাশ ফেরত, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন। তাদের দাবি, আর কোনো বাবা-মার বুক যেন এভাবে কেউ খালি করতে না পারে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
শনিবার দুপুরে নিহত আকরামের বাড়ি গিয়ে প্রায় ১০০-১৫০ গজ দূর থেকে কান্না শোনা যায়। বাড়ির সামনে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী বাবা মোরশেদ মিয়াকে শান্তনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছেন। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বাভাবিক কথা বলছেন। পরক্ষণে ছেলের কথা বলে হাউ-মাউ করে কেঁদে চলছেন। পাশে দাদা মো. শহীদ মিয়াও নাতির কথা বলে কাঁদছেন।
আকরামের ঘরে গিয়ে দেখা গেছে, ভাতিজার ছবি হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন ফুফু রেশমী বেগম। আকরামের মা মোবিনা বেগম চুপ করে বসে আছেন। তার চোখ-মুখ লাল। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে বিলাপ শুরু করেন, ‘আমার বাবার আর ঘুম ভাঙল না।’
বাবা মোরশেদ মিয়া জানান, গত রোববার রাত ১১টার দিকে ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন পরিস্থিতি ভালো নয় বলে জানায়। সবার কাছে মাফ চায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধার পর রাশিয়া থেকে এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, ইউক্রেনের হামলায় আকরাম গত সোমবার নিহত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা তখন মরদেহ দেখতে চাইলে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে বলেন, ‘যে স্থানে আকরাম নিহত হয়েছে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।’
তিনি আরো জানান, শনিবার বিকেলে সহযোদ্ধা ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাসিন্দা মিরাজ জানিয়েছেন, লাশ ট্র্যাক (অবস্থান সনাক্ত) করা গেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অবস্থান করায় কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না।
লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. শামীম চৌধুরি জানান, এ ধরনের মৃত্যু কারো কাম্য নয়। নিহতের লাশ দেশের আনার ব্যবস্থা, দরিদ্র পরিবারটির ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া জানান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।
- বিষয় :
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
- আশুগঞ্জ
- যুবক নিহত