চাষাবাদ
২৫ জাতের আঙুর মাসুদের বাগানে

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেজমতপুর তালুকদারপাড়ায় নিজের আঙুর বাগানে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ তালুকদার। সম্প্রতি তোলা সমকাল
মাজহারুল আলম মিলন, পীরগঞ্জ (রংপুর)
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫ | ০১:০০ | আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ | ১১:০৮
বাঁশ ও প্যারাসুট সুতায় তৈরি মাচাজুড়ে লতানো গাছ। সবুজ পাতার মাঝ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লম্বা, কোথাও গোলাকার হালকা বাদামি, হলুদ-সবুজ রঙের থোকা থোকা আঙুর। শুধু আঙুর নয়, প্রায় এক বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ফলের গাছও। সড়কের পাশে বাগানটি দেখলে যে কারও চোখ আটকে যাবে।
এমন বাগান তৈরি করে এখন আলোচনায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ তালুকদার। স্থানীয়রা জানান, তাদের ধারণা ছিল, বিদেশি ফল আঙুর দেশে চাষ করলে টক হয়। মাসুদ সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন।
মাসুদ সমকালকে জানান, দুই বছর আগে ৩৫ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে নিজের ২৭ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। গত বছর ফলন আসে। প্রতিবেশী ও দর্শনার্থীরা মিষ্টি সেই আঙুর খাওয়ার পর সাড়া পড়ে যায়। বর্তমানে তাঁর বাগানে ২৫ জাতের আঙুরের ৫০টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বাইকুনুর, অ্যাকোলো, ব্ল্যাক ম্যাজিক, কৃষ্ণা, গ্রিন লং, অস্ট্রেলিয়ান বারোমাসি, চয়ন, সুপার সোনাকা, ছমছমসহ ১০ থেকে ১২ জাতের আঙুরের ফলন ভালো। এ বছর সবচেয়ে বেশি ধরেছে রাশিয়ান বাইকুনুর। এ জাতটি দেশের আবহাওয়ায় চাষের উপযোগী হতে পারে। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে সব জাতের আঙুর পরিপক্ব হবে। এসব আঙুর দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও মজার। মিষ্টি এবং হালকা টক-মিষ্টি দুই ধরনের আঙুরই রয়েছে।
মাসুদ বলেন, আঙুরের চারা, মাচা, পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে তাঁর খরচ পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। রোপণের এক বছর পরই আঙুর বাজারজাত করা সম্ভব। প্রতিটি গাছ থেকে ফলন মেলে ১৫-১৮ কেজি। সেই হিসাবে ৫০টি গাছে কমপক্ষে ৭৫০ কেজি আঙুর পাওয়া যাবে।
আঙুরের পাশাপাশি অন্তত ২৫ জাতের ফলের গাছ রয়েছে মাসুদের। চারাও বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে আঙুর, ত্বীন ফল, মাল্টা ও কমলার চারা বিক্রি করে মাসে ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়েছে তার।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী উন্নতমানের আঙুর চাষে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। গোবর বা জৈব সার এবং পোকামাকড় ঠেকাতে কীটনাশক ভারমিটেক ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান, দেশে আঙুরের বাজার পুরোটাই বলতে গেলে আমদানিনির্ভর। মাসুদের মতো কৃষি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে অন্য কৃষকরা আঙুর চাষে উৎসাহিত হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব হতে পারে।