খাসজমিতে দোকানপাট পানিপ্রবাহের নালা বন্ধ

কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজার এলাকায় হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতে সরকারি জমিতে নির্মিত অবৈধ দোকানঘর সমকাল
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫ | ২৩:৩১
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে সরকারি রাস্তার জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে দোকানপাট। সড়ক-সংলগ্ন নালার মুখে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে ঝিলের পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ঝিলের পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয় আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে আসন্ন বর্ষায় এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ময়লা পানি ওঠার আশঙ্কা করছেন তারা।
শমশেরনগর বাজার এলাকা ভানুগাছ রোডে হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে রাস্তার সরকারি জমি দখল করে ১৫-২০ বছর ধরে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। ফলে পথচারী চলাচলের রাস্তা বন্ধসহ পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা জানান, কালিবাড়ী মার্কেটের বিপরীতে চা বাগান ঝিলের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাস্তার সরকারি জমি দখল করে দোকান স্থাপন করেন। পরে এসব দোকান নিরাপত্তার টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাস্তার সরকারি জমিতে একটি ভলকানাইজিং, দুটি রেস্তোরাঁ, দুটি স্টেশনারি দোকান, সাইকেল মেকারের দোকান, সিএনজি অটোরিকশাচালক সমিতি, মাইক্রোবাস (লাইটেস) চালক সমিতি ও ট্রাক, পিকআপচালক সমিতির অফিস স্থাপন করা হয়। এ পথে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা যাতায়াত করলেও এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেন না।
অন্যদিকে দখলকৃত জমির পেছনে শমশেরনগর কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে চা বাগানের ঝিলের পানিপ্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করে ফেলার অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লা-আবর্জনায় নালার মুখ বন্ধ হওয়ায় মাছবাজারসহ বাসাবাড়ির ময়লা কালো পানি রাস্তার ওপরে চলে আসছে। ফলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচলে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নালার মুখ বন্ধ থাকায় বাজারের নালার কালো ময়লা পানি রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় এ পথে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লি ও সাধারণ মানুষজন ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
শমশেরনগর ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে ঝিলের পানিপ্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। নালার ওপর দোকানঘর থাকায় পরিচ্ছন্নতা কাজেও বাধা সৃষ্টি হয়। চা বাগানের বিভিন্ন টিলার বৃষ্টির পানি নেমে এ নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখন নালার মুখ না খুলে দিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চা প্লান্টেশন এলাকায় পানি প্রবেশ করবে।
শমশেরনগর বাজার ইজারাদার আসাইদ মিয়া জানান, তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের ইজারাদার নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনায় সেটি ভরে গিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
দখলকৃত জায়গার শিঙাড়া বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, এই জায়গার মালিক উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালিক বাবলুর ছোট ভাই শিবলু মিয়া। তাঁর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকানদারি করছেন তিনি। প্রতি মাসে তাঁকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মালিক নিজে এসে ভাড়া নিয়ে যান। এদিকে চা ব্যবসায়ী মুমিন মিয়া বলেন, মাহমুদ আলী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে তিনি ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে দখলদার ব্যবসায়ী মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এটি সরকারি জমি এ কথা সঠিক। তবে তিনি ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই স্থানের দখল নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। পরে সেগুলো অন্য ব্যবসায়ীদের ভাড়া দিয়েছেন। তিনি জানান, তাঁর মতো আরও অনেকেই বিভিন্ন স্থানে টাকার বিনিময়ে জমির দখল নিয়ে দোকানপাট ভাড়া দিয়েছেন। কার কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়েছেন– এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্থানীয় এই ব্যবসায়ী।
ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই-এক দিনের ভেতরে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- দোকান