রাবিতে হামলা: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শাহবাগবিরোধী ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সংবাদ সম্মেলন
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫ | ২০:৩০ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ | ২০:৪৬
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে মঙ্গলবার রাতে দু’দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ ও ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে সংবাদ সম্মেলন করে দুই পক্ষ এ অভিযোগ করে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরও গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দায়ী করে হামলাকারীদের বিচার এবং তাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাসিম সরকার বলেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায় মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিল ডাকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একই সময়ে ছাত্র শিবিরের একটি আনন্দ মিছিল পরিবহন মার্কেটে বামপন্থিদের আড্ডার স্থলকে ঘিরে বারবার প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আমরা তাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি। তাদের সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে ৪৫ মিনিট দেরিতে সোয়া ৮টায় মিছিল শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান, ছাত্র মিশনের সভাপতি জি এ সাব্বিরসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে আনুমানিক ২০০ জনের একটি মব আমাদের দিকে তেড়ে আসে এবং অতর্কিত ইট পাটকেল, চেয়ার ও লাঠি ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। আমরা উত্তেজিত না হয়ে সংঘর্ষ এড়িয়ে মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘পরবর্তীতে মিছিলটি নিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবী চত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে পৌঁছালে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। এ সময় আমরা প্রায় সকলেই ইট-পাটকেলের আঘাত পাই। ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি-ঘুষি মারা হয় এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশারাফকে ইটের আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে নাসিম সরকার বলেন, ‘চব্বিশ পরবর্তী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কায়দায় এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রমণের বিচার চাইতে আমরা প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রক্টরিয়াল বডি চা চক্রে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখছিল। এত বড় হামলার ঘটনা ঠেকানোর তারা কোনো চেষ্টাই করেনি। পরিবহন চত্বরে হামলার পরে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে রক্তাক্ত হতো না। এ ঘটনায় আমরা নিরাপত্তা চাইলে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে প্রশাসনকে সন্ত্রাসীদের তাবেদার মনে অপসারণ চাইতে বাধ্য হব।’
অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে মৌখিক বক্তব্যে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের সংগঠক ও রাবি শাখা ছাত্র মিশনের সভাপতি জি এ সাব্বির বলেন, ‘দেশের স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপকারী ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নামে সৃষ্ট মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ও সেই মব ইন-জাস্টিসের বিচার দাবি করে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র ব্যানারে রাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত হন। তথাকথিত গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ব্যানারে বাম-শাহবাগী গোষ্ঠী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি মশাল মিছিল ডাকে। যখন জানতে পারি তাদের কর্মসূচি হচ্ছে না। তখন বিশৃঙ্খলা এড়াতে পরিবহন চত্বরের একটি ফাঁকা জায়গায় সমবেত হই এবং আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি কিছু সময় দেরিতে শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে আসার পর সবার উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র বিভিন্ন সংগঠক ও নেতারা। ঠিক তখনই পেছন থেকে বাম সংগঠনের কয়েকজন মশালধারী আমাদের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার, জামায়াত-শিবির’ বলে বুলিং করে। তারা স্লোগান দিয়ে বারবার মশাল নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। ইচ্ছে করেই একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ভিকটিম কার্ড খেলার পুরোনো চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। ইট গিয়ে লাগে আমাদের সহযোদ্ধা তারেকের গায়ে। এরপরই মূলত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।’
জি এ সাব্বির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সবাইকে শান্ত করে আমরা যখন অন্যদিকে চলে গেছি তখন পুনরায় আমরা যে স্থানে ছিলাম সেখানে এসে আমাদের গায়ে পড়ে হাতাহাতি শুরু করেছে। একপর্যায়ে আমাদের গায়ে জ্বলন্ত মশাল পর্যন্ত ছুঁড়ে মারে লাল বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। উভয়পক্ষের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি থেকে আমাদের কয়েকজন সংগঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য। এই ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও লাল বাহিনীর ফাঁদে পা দিয়ে বিবৃতি ও মিছিল করেছে যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার।’
ছাত্রশিবিরের নিন্দা
এদিকে হামলার ঘটনায় আজ নিন্দা জানিয়েছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘শাহবাগবিরোধী ছাত্র-ঐক্য’-এর মিছিলে সংহতি প্রকাশ করে বুধবার শান্তিপূর্ণ মিছিলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পরিবহন মার্কেটে সমাবেশে মিলিত হলে হঠাৎ বাম সংগঠনের একদল উগ্র নেতাকর্মী মিছিল পরবর্তী সমাবেশে হামলা চালায়। এতে অনেক নেতাকর্মী আহত হন এবং সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে বাম সংগঠনগুলো সহিংস রাজনীতির চেহারা আবারও উন্মোচিত করেছে। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।