রোগ প্রতিরোধী সুগন্ধিযুক্ত নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন

গাকৃবির উদ্ভাবিত ‘জিএইউ ধান-৩’ দেখছেন গবেষক নাসরীন আক্তার সমকাল
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ০১:১৩
সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত ৯০তম নতুন জাতের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিএইউ ধান-৩’। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের পর এটিই প্রথম নতুন জাত হিসেবে নিবন্ধিত হলো, যা গাকৃবির গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯০টিতে পৌঁছাল। গাকৃবির গবেষণা মাঠে চার বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তী সময়ে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০ এপ্রিল জিএইউ ধান-৩ এর ছাড়পত্র দেয়।
এ ধানে উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এর জিঙ্ক ও লৌহ মানুষের শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে। জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। দানা চিকন ও লম্বা এ ধান কম সময়ে পরিপক্ব হয়।
এর গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়, যা পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। এটি গড়ে ১৫ শতাংশ বেশি ফলন দিতে সক্ষম, যা বাংলাদেশের মতো কৃষিভিত্তিক দেশে উপযোগিতা অনেক।
গাকৃবি সূত্র বলছে, এ জাতের ফলন হেক্টরপ্রতি সাড়ে পাঁচ টন থেকে ছয় টন। এতে অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ, যা শরীরে শর্করা জাতীয় খাবার সহজে ভেঙে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। জিঙ্কের পরিমাণ বেশি, যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী।
এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক জাত। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, জিএইউ ধান-৩ কেবল নতুন জাত নয়, এটি পুষ্টি, উৎপাদন ও কৃষকের আর্থিক উন্নয়নের মাঝে শক্ত সেতুবন্ধন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অবদান রাখবে।’
- বিষয় :
- ধানক্ষেত