খামারে বিক্রি বেশি, চিন্তায় হাটের ইজারাদার-বিক্রেতা

সরকারি হিসাবে উপজেলার চাহিদা ৫ হাজার ৬০৫ পশু, শুধু খামারেই প্রস্তুত আছে ৫ হাজার ৮৯৪টি
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ২৩:৪৫
দিন কয়েক পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে বিভাগের অন্যান্য এলাকার মতো বিশ্বনাথ উপজেলাতেও বাড়তে শুরু করেছে কোরবানির পশুর বেচাকেনা। হাটের তুলনায় এবার খামার থেকে কোরবানির যোগ্য বিভিন্ন ধরনের পশু কেনার পরিমাণ বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আছেন হাটের ইজারাদার এবং বিক্রেতারা।
উপজেলায় এ বছর মোট সাতটি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে কোরবানির উপযুক্ত পশুর মজুত যথেষ্টসংখ্যক থাকলেও বিক্রি সে তুলনায় বেশ কম। জানা গেছে, অধিকাংশ পশুই এবার সরাসরি খামার থেকে কিনছেন ক্রেতারা।
প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় ঈদ করতে অনেকে দেশে আসেন। স্থানীয়দের তুলনায় দামে এবং আকারে বড় পশু কোরবানি বেশি দেন প্রবাসীরাই। তাদের অধিকাংশ হাটে যাওয়ার ঝক্কি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খামারিদের কাছ থেকে পশু কিনছেন তারা।
স্থানীয় হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল, ভেড়া উঠলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সে তুলনায় বিক্রি একেবারে কম। হাটের চেয়ে বরং খামারে বেশি পশু বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে চড়া দামের গরু বড় খামার থেকে কেনা হচ্ছে বেশি। রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট এবং স্থানীয় খামার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
উপজেলার ৭টি পশুর হাটের মধ্যে বিশ্বনাথ পুরান বাজারের হাটটি সবচেয়ে বড়। এই হাটে বিক্রি বাড়াতে ইজারাদাররা প্রতিটি পশুর জন্য হাসিল নির্ধারণ করেছেন ৫০০ টাকা। তাতেও হাটে পশু বিক্রি বাড়ছে না।
পুরান বাজার হাটে কথা হয় আবুল লেইছ নামে এক খামারির সঙ্গে। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ৭টি গরু নিয়ে তিনি উপজেলার এ হাটে আসেন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, হাটে আসার পর দুই দিনে তাঁর একটি গরুও বিক্রি হয়নি। দু-একজন ক্রেতা গরু দেখলেও লাখের গরু হাজারের ঘরে হাঁকছেন। অথচ এক একটি গরু ন্যূনতম ১ লাখ ৩০ হাজারে বিক্রি না করলে লোকসান নিশ্চিত।
আবুল লেইছের ভাষ্যমতে, বাজারে ক্রেতা একেবারেই কম। আরও দুটি হাট ঘুরে এখানে এসেছেন তিনি। দু-একজন ক্রেতা আসেন। তারা লাখের ওপর বিক্রির চিন্তা এমন গরুর দাম ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা হাঁকছেন। এই দামে বিক্রি করা হলে লোকসান হবে। তিনিসহ এই হাটে আসা ৮ শতাধিক বিক্রেতার বেশির ভাগই হতাশ।
রোববার আলিম জানান, হাটে বিক্রি না থাকলেও তাঁর খামারে ৭৫টি গরু আছে। এর মধ্যে ১০টি বড় গরু ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা দামের। বাকি ৬৫টি ছোট ও মাঝারি। হাটে ১৫টি গরুর মধ্যে একটিও বিক্রি হয়নি তাঁর। অথচ খামার থেকে ৩০টির মতো গরু বিক্রি করেছেন তিনি।
পীরের বাজারে উপজেলার টুকেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও এনায়েত উল্লাহ এগ্রো ফার্মের মালিক আমির আলী বলেন, তাঁর খামারে দেশি-বিদেশি ৪৫টি গরু আছে। এরই মধ্যে সেখান থেকে ২৫টি ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি করেছেন। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টি বড় এবং ৫টি মাঝারি রয়েছে। হাটের চেয়ে খামারগুলোতে গরু বিক্রি হচ্ছে বেশি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩টি আর অস্থায়ী ৪টি। স্থায়ী হাটের মধ্যে রয়েছে বিশ্বনাথ পুরান বাজার, পীরের বাজার ও বৈরাগী বাজার। অস্থায়ী পশুর হাট হচ্ছে রামপাশা বাজার, মাছুখালী বাজার, সিংগেরকাছ বাজার ও মুফতির বাজার। এ বছর পুরান বাজার পশুর হাটটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী বশির আহমদ। আজিজুর রহমান নামে অপর ব্যবসায়ী সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন পীরের বাজার। ৩ লাখ টাকায় বৈরাগী বাজারও ইজারা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, অস্থায়ী ৪টি পশুর হাটের মধ্যে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় রামপাশা বাজার, ২৩ হাজার ৫০০ টাকায় সিংগেরকাছ বাজার, ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে মুফতির বাজার ও মাছুখালী বাজার ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে, ইজারাদাররা বলছেন হাট নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। হাট-বাজারে পশু বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ায় তাদের লোকসান হবে।
বিশ্বনাথ পুরান বাজার পশুর হাটের ইজারাদার বশির আহমদ বলেন, হাটে বিক্রি বাড়াতে যে কোনো দামের গরুর হাসিল তারা ৫০০ টাকা করেছেন। এতেও ক্রেতা আকৃষ্ট হচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশঙ্কা বাড়ছে। গত রোববার পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাট থেকে মাত্র ৭০ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন। এতে ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূলধন ওঠানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পীরের বাজারের ইজারাদার আবুল হোসেন ও আজিজুর রহমান বলেন, সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিলেও আরও দেড় লাখ টাকা তাদের উপরি খরচ। সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার ওপরে আয়ের লক্ষ্য থাকলেও সে আশা শেষ। এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার টাকা পশু বিক্রি থেকে এসেছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার ৪৩৮টি গ্রামের মধ্যে দেড় শতাধিক গরুর খামার ও ১৫টি ছাগলের খামার রয়েছে। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে পশু কেনাবেচার হাট-বাজার রয়েছে মোট ৩৯টি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস শহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বেসরকারিভাবে ৯ হাজার হলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৫ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে উপজেলার নিবন্ধিত ৯৮টি গরুর খামার ও ৪টি ছাগলের খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯৪টি পশু। হাটগুলোতে আরও পশু আছে। সব মিলিয়ে চাহিদার চেয়ে পশুর মজুত অনেক বেশি। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই।
- বিষয় :
- গরু