পাশাপাশি কবরে বাবা ও দুই ছেলে, পরিবারে মাতম

ছবি: ফাইল
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫ | ০২:৩৬
টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরভাবনা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ তিনটি দাফন করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় চরভাবনা বড় মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়।
নিহতরা হলেন– চরভাবনা গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ আলী, তাঁর দুই ছেলে রাহাত মিয়া ও রাতুল মিয়া। গত মঙ্গলবার সকালে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে শেরপুর ফেরার পথে টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাস-ট্রাক সংঘর্ষে তাদের প্রাণ যায়। এ ঘটনায় আহত হন একই পরিবারের আরও চারজন। ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই তিনজনের লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
নিহত আমজাদের বড় ভাই টগু মণ্ডল ভাই-ভাতিজার লাশ দেখে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। মাঝেমধ্যে বুক চাপড়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘মাবুদ, তুমি এইডা কি করলা। আমারে না নিয়া ওদের কেন নিয়া গেলা। বড় ভাইয়ের কাঁধে ছোট ভাই ও ভাতিজার লাশ তুইলা দিলা। এ তোমার কেমন বিচার।’
লাশ দেখে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন আমজাদের ছোট ভাই সফর মণ্ডল। জ্ঞান ফিরে এলেই বলতে থাকেন, ‘ভাইজান চইলা গেল, অহন তাঁর কোরবানি কে দেব। ও রাতুল, ও রাহাত তরা কই গেলি। আমারে অহন কেডা চাচা কইয়া ডাকব।’
চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, গত সোমবার কোরবানি দেওয়ার জন্য তাঁর নানা আমজাদ দেড় লাখ টাকা পাঠান। কেনা হয় একটি গরু। প্রতিবছর তাঁর নানা ঈদে বাড়িতে এসে এলাকার গরিব মানুষকে অর্থ সাহায্য করতেন। নিজে তাদের হাতে তুলে দিতেন কোরবানির গোশত।
আমজাদ হোসেন ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। থাকতেন রাজধানীর বনশ্রীতে। তাঁর ছোট বোন মোর্শেদা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে তাঁর ভাই একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু ৯টার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই ও ভাতিজারা মারা গেছে। এ কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, ‘ঈদে আমার ভাই-ভাতিজা কোরবানি হইয়া গেল। আল্লাহ এ তোমার কেমন বিচার।’
দুর্ঘটনায় আহত আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রাহাতের আহত স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে স্বামী, শ্বশুর ও দেবরের দাফন কাজে অংশ নেওয়া জন্য বাড়িতে রয়েছেন।
- বিষয় :
- সড়ক দুর্ঘটনা
- শেরপুর