ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সীমাহীন সংকটে হাইওয়ে পুলিশ, নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন অধরা

সীমাহীন সংকটে হাইওয়ে পুলিশ, নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন অধরা

ছবি: সমকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫ | ২০:৫৮ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ | ২২:৪২

ভাড়া বাড়িতে চলছে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম। নিজস্ব কার্যালয়, পর্যাপ্ত জনবল, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সড়কপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে এই রিজিওনের হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ করে যানজট নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা মোকাবিলা ও ভারতীয় সীমান্ত পথে মাদক চোরাচালান রোধে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

২০২৩ সালে স্বতন্ত্র রিজিওন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশ। এই রিজিওনের কর্মকর্তাদের মতে, সরকারি নিজস্ব অবকাঠামো না থাকাটা কেবল দাপ্তরিক কার্যক্রমকেই ব্যাহত করছে না, বরং এর কর্মপরিবেশ ও দক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের যেমন স্থানের সংকুলান হচ্ছে না, তেমনি কর্মপরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে তাদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব পড়ছে।

আধুনিক কমান্ড সেন্টার, সার্কেল অফিস, পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা ও জরুরি সরঞ্জাম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান না থাকায় তাদের কর্মদক্ষতা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। এই অবকাঠামোগত দুর্বলতা একটি নবগঠিত রিজিওনের সক্ষমতাকে গোড়া থেকেই সীমিত করে দিচ্ছে।

অফিস ভবনের সংকটের পাশাপাশি ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের যানবাহনের অভাবও প্রকট। তাদের একটি কার্যকরী র‌্যাকার নেই। আগে একটি থাকলেও তা বর্তমানে বিকল। ফলে মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি দ্রুত সরানোর প্রয়োজন হলে তাদের অন্য জায়গা থেকে র‌্যাকার আনতে হয়। এতে একটি ছোট গাড়ি সরাতেও তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। মালবাহী গাড়ি সরাতে আরও বেশি সময় লাগে।

ময়মনসিংহ হাইওয়ে রিজিওন চারটি থানা নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো– ভরাডোবা, শ্যামগঞ্জ, নান্দাইল ও বকশীগঞ্জ। প্রতিটি থানায় মাত্র একটি করে গাড়ি বরাদ্দ আছে, যা দেড়শ কিলোমিটার মহাসড়ক ও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সীমান্ত এলাকার জন্য অপ্রতুল। তাছাড়া বকশীগঞ্জ হাইওয়ে থানার গাড়িটি গত বছরের ৫ আগস্টের পরে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বর্তমানে সরকারি গাড়ি ছাড়াই চলছে এ থানার কার্যক্রম।

জানা গেছে, রিজিওন ও সার্কেল অফিস মিলিয়ে যে দুটি গাড়ি আছে– সেগুলোও বেশির ভাগ সময় নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকে। গাড়িগুলো অত্যন্ত ধীরগতির যা সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে চলে। অথচ চোরাকারবারি ও দুষ্কৃতকারীরা দ্রুতগতির যানবাহন ব্যবহার করে। যার ফলে হাইওয়ে পুলিশ তথ্য পেয়েও অনেক সময় তাদের আটক করতে ব্যর্থ হয়।

হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ভরাডোবা থানার আওতায় ৫৪ কিলোমিটার, শ্যামগঞ্জ থানার আওতায় ৩০, বকশীগঞ্জ থানার আওতায় ৪৬ ও নান্দাইল থানার আওতায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এই চারটি থানার মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও বকশীগঞ্জে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দায়িত্বে আছেন মাত্র ১০০ জন পুলিশ সদস্য। এত অল্প জনবল দিয়ে মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যানজট নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং চোরাচালান রোধ প্রায় অসম্ভব।

রিজিওনাল অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশের প্রসিকিউশন অনুযায়ী চোরাচালান, দস্যুতা, মাদক ও সড়ক দুর্ঘটনা মিলে ১৯৪টি মামলা হয়েছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ রিজিওনের আওতাধীন হাইওয়ে এলাকায় গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১৮৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত, আহত হয় ৫৮ জন। দুর্ঘটনা ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভরাডোবা হাইওয়ে থানায়।

ময়মনসিংহ রিজিওনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার সুদৃষ্টি দিলে ময়মনসিংহ হাইওয়ে পুলিশ জনগণের ভোগান্তি নিরসন এবং একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ ছোয়াইব বলেন, ‘২০২৩ সালে ময়মনসিংহ রিজিওন গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি সরকারি অফিস পাইনি আমরা। ডিউটি করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি নেই।’ তাঁর ভাষ্য, জনবল সংকটের কারণে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েও সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে পারেন না তারা।

আরও পড়ুন

×