সীমান্ত আইনে আটকে আছে মসজিদ ও সড়ক সংস্কার

মসজিদের বর্ধিত অংশ লাগোয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নির্ধারণী পিলার দেখা যাচ্ছে ঠিক পেছনেই (লাল বৃত্ত চিহ্নিত) সমকাল
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ | ০০:০৩
ভারতের সীমান্তবর্তী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের গজুকাটা এলাকা। দেশভাগের আগে ব্রিটিশ শাসনামলে ওই এলাকায় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিল গ্রামবাসী। বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশনাবলি অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকায় ওই মসজিদের সংস্কারকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কাজ করতে গেলে আপত্তি জানাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশাবলি-১৯৭৫ অনুযায়ী, উভয় দেশের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত যে কোনো কাজ সম্পন্নের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজিবি সূত্র বলছে, আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও ধর্মীয় উপাসনালয়ের ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় বিএসএফের দায়িত্বশীলরা সহযোগিতা করলে কাজ করা সম্ভব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহু বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মসজিদটির জরাজীর্ণতা ঘোচাতে এবং স্থান বর্ধিতকরণে সম্প্রতি সংস্কারকাজে হাত দেওয়া হয়। জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শত বছরের পুরোনো মসজিদটির আয়তন বাড়ানোই কাজের মূল লক্ষ্য। তবে সে কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিএসএফ। চার বছর ধরে সীমান্তবর্তী গ্রামের ওই মসজিদটির সংস্কারকাজ দফায় দফায় তাদের বাধার মুখে থমকে আছে।
একই অবস্থা মসজিদের যাতায়াত সড়ক ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী প্রতিরক্ষা বাঁধেরও। গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে দুই বছর আগে রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু করা হলেও তা থেমে যায় বিএসএফের খবরদারির কারণে। মূলত এ ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সীমান্ত আইনটি।
সীমান্তবর্তী গজুকাটাবাসীর দাবি, দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও রাস্তা পাকাকরণ কাজের প্রতিবন্ধকতা যেন দ্রুত দূর করা হয়।
দেশ ভাগ হওয়ার পর গজুকাটা গ্রামের জামে মসজিদটি সীমান্ত পিলার ১৩৫৭-এর ২০ গজের মধ্যে পড়ে যায়। গ্রামবাসীর ক্ষোভ থাকলেও মূলত সীমান্ত জটিলতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্ত আইন অনুযায়ী, শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। বিভাজনের আগে থাকা স্থাপনা যে অবস্থায় ছিল, সেটি সে অবস্থায় থাকবে। সেটির পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন করা যাবে না। এ আইনের কারণেই গজুকাটা গ্রামের মসজিদের সংস্কারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই কারণে গ্রামের চলাচলের একমাত্র সড়কটিতেও কাজ করা যাচ্ছে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজার সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মসজিদটি সীমান্ত পিলারের খুব কাছে হওয়ায় এর বর্ধিত অংশ নির্মাণ কিংবা পুনর্নির্মাণকাজে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। এ বিষয়ে দুই দেশের অধিনায়ক পর্যায়ে বারবার আলোচনা হলেও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। তবে সড়ক সংস্কার ও পাকাকরণ কাজের জন্য দুই বছর আগে বিএসএফের তৎকালীন দায়িত্বশীল অধিনায়ক মৌখিকভাবে সম্মতি দিলেও তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে আসা নতুন অধিনায়ক সে সম্মতি তুলে নেন।
সরেজমিন গজুকাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সীমান্ত পিলারের খুব কাছে রয়েছে জামে মসজিদ। গ্রামবাসী চার বছর আগে মসজিদের বর্ধিত অংশের বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করেন। ছাদ ঢালাইয়ের সময় বিএসএফ বাধা দেয়। এর পর আর কাজ হয়নি।
গ্রামের মুরব্বি আব্দুস সাত্তার বলেন, শত বছরের পুরোনো এ মসজিদে এখন মুসল্লি সংকুলান হয় না। সে জন্য উত্তর দিকে খালি অংশে মসজিদ বর্ধিত করার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিএসএফের বাধার কারণে কাজ আটকে আছে। সামসুল ইসলাম বলেন, বিজিবির কর্মকর্তারা যতবার তাদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকা নিয়ে মতবিনিময় করেছেন, মসজিদ ও সড়কের কাজ নিয়ে কথা হয়েছে। বিজিবির দায়িত্বশীলরা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজারের অধিনায়ক (সিগন্যালস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল হক সমকালকে বলেন, ‘সীমান্ত আইন অনুসারে সীমান্তের ২০ গজের মধ্যে হওয়ায় ওই মসজিদ এবং সড়কের কাজের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। তারপরও আমাদের দিক থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে সমস্যা সমাধানে। দু’দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকার সমস্যাগুলো সমাধানে উভয় পক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ের ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় বিএসএফের দায়িত্বশীলরা সহযোগিতা করলে কাজ করা সম্ভব।
- বিষয় :
- সীমান্ত