ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ছাতক সিমেন্টের মালপত্রের নিলাম সিন্ডিকেটের হাতে

ছাতক সিমেন্টের মালপত্রের নিলাম সিন্ডিকেটের হাতে

.

 মুকিত রহমানী, সিলেট

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০১:০৬ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ০৭:৫৫

সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের বাতিল মালপত্র (স্ক্যাপ) বিক্রির নিলাম প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের কবজায় পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রের কারণে দরপত্রের শিডিউলও জমা দিতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। নিলাম প্রক্রিয়ায় ৫৭টি শিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র আটটি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ৬০০ টাকার পে-অর্ডারকে ৬ কোটি টাকা দেখিয়ে জমা দেওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়।

জালিয়াতি ও সিন্ডিকেটের বিষয়টি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। উল্টো সিন্ডিকেট সদস্যদের নেপথ্যে সহায়তা করে মালপত্র নিলাম নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অভিযোগ করেছেন। 

তারা জানান, প্রায় ১৩০ কোটি টাকার মালপত্র হলেও সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৭১ কোটি টাকা। এতে সরকার প্রকৃত রাজস্ব হারাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ পুনঃদরপত্রের দাবি জানিয়েছেন। 

সম্প্রতি স্ক্যাপ মালপত্র বিক্রির জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। শিডিউল মূল্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাখা হয় ৩০ হাজার টাকা। এর আগে প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করে শিডিউল মূল্য রাখা হয়েছিল ৫ হাজার টাকা। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের উপধারা-১ অনুযায়ী দরপত্র দলিলের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করার কথা যাতে দরপত্র দলিলের মুদ্রণ ও তা সরবরাহ ব্যয়ের বেশি না হয়। 

অথচ ৫ হাজার থেকে দ্বিতীয়বার নিলামে শিডিউল মূল্য ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে শিডিউল জমার জন্য বাক্স রাখা হলেও সিন্ডিকেটের বাধার কারণে অনেকে জমা দিতে পারেননি। অথচ ৫৭টি শিডিউল বিক্রি করা হলেও জমা পড়ে ৮টি। গত ২৫ মে দরপত্র খোলার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হয় বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি দর উল্লেখ করে ৭৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ পে-অর্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে ৬ কোটি টাকার জায়গায়  ৬০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট জমা দেয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি বাদ পড়ে। ৭১ কোটি ১ লাখ টাকায় দ্বিতীয় দরদাতা হয় বিছমিল্লাহ সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং, ৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকায় তৃতীয় মেসার্স রাকিব হাসান, ৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকায় চতুর্থ কর্ণফুলী রিভার্স ট্রান্সপোর্ট, ৬১ কোটি টাকা শহীদ ট্রেডার্স, ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা রাব্বি এন্টারপ্রাইজ, ৫১ কোটি টাকা সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা দরদাতা হয় মা আয়রন পয়েন্ট।

দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিছমিল্লাহ সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক স্বপন মিয়াসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা সুবিধা নেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও শীর্ষনেতাদের সঙ্গে স্বপন মিয়াকে দেখা যেত। মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে স্বপন মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।

এদিকে নিলাম কার্যক্রমে বাধা, অবৈধ হস্তক্ষেপসহ রাজস্ব বঞ্চিতের কথা উল্লেখ করে গত ২৯ মে সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে অভিযোগ করেন জুলকারনাইনস ট্রেড অ্যান্ড ট্রেকের মালিক আবু সাঈদ অভি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সিন্ডিকেট সদস্যদের বাধার করণে শিডিউল জমা দিতে পারেননি। পুলিশ ও আনসারের সামনে তাঁকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। একইভাবে সিলেট গণপূর্ত অফিসে গিয়েও জমা দিতে পারেননি শিডিউল। ৮টি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে নিলাম নেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বেশি দরে মালপত্র কিনতে ইচ্ছুক দাবি করে গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত নিলামের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানান। একইভাবে চৌধুরী লাইম ইন্ড্রাস্টিজ, সাইম অ্যান্ড সাইম এন্টারপ্রাইজ ও আহমদ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে তারা পে-অর্ডার জালিয়াতি ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামী লীগের দাবি করে দরপত্র বাতিলের দাবি জানান। 

এ ব্যাপারে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির এমডি আব্দুর রহমান বলেন, নিলাম প্রক্রিয়াধীন। আগামী বোর্ড তা সভায় উপস্থাপন হবে। পরে সেটা মন্ত্রণালয়ে যাবে। পে-অর্ডার জালিয়াতি বিষয়ে তিনি জানান, ওই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংক তার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিচ্ছে। অংশ না নেওয়া প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, শুরুতে অভিযোগ কেউ করেনি। যাচাই-বাছাইয়ের কয়েকদিন পর অভিযোগ করা হয়। তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
অনিয়ম প্রসঙ্গে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান জানান, তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। দরপত্রের সর্বশেষ অবস্থা পরে জানাতে পারব। 

আরও পড়ুন

×