মহাসড়কে সংকেতবিহীন একাধিক গতিরোধক, ঘটছে দুর্ঘটনা

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ১ নম্বর মোড়ে ঝুঁকিপূর্ণ গতিরোধক সমকাল
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০০:৫৭
মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক গতিরোধক। এসব গতিরোধক নির্মাণে কোনো নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
রং বা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ছাড়াই গতিরোধক নির্মাণ করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জ অংশের অন্তত চারটি গতিরোধক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে, রাতে গতিরোধকগুলো দৃশ্যমান না হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
গত রোববার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার দত্তপাড়ায় ঘটে এক সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, একজন মোটরসাইকেল আরোহী পেছনে স্ত্রী ও মাঝখানে শিশু সন্তান নিয়ে যাচ্ছিলেন। পৌর এলাকায় একটি গতিরোধক অতিক্রম করার সময় মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। এতে স্বামী-স্ত্রী ও শিশুটি আহত হন। সেসময় বড় কোনো যানবাহন না থাকায় রক্ষা পান তারা। তিনি বলেন, ‘আমি চালককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি স্পিড ব্রেকারটি (গতিরোধক) তিনি দেখতে পাননি। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।’ এ সময় স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এ ধরনের দুর্ঘটনা এই এলাকায় প্রায়ই ঘটছে।
গত ২৮ মে দত্তপাড়া এলাকার ১ নম্বর মোড়ে বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ মাহেন্দ্রর ৩ যাত্রী নিহত ও ছয়জন আহত হন। এর পর ১৫ জুন একই স্থানে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থায় এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ সেখানে পাশাপাশি দুটি গতিরোধক নির্মাণ করে। এর আগে ৭ এপ্রিল মহাসড়কের হারুয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা মহাসড়ক অবরোধ করে ঘটনাস্থলে গতিরোধক নির্মাণের দাবি জানান। উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করলে পরে সওজ কর্তৃপক্ষ সেখানে একইভাবে দুটি গতিরোধক নির্মাণ করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের দত্তপাড়া ১ নম্বর মোড় এলাকায় দুটি এবং হারুয়া এলাকায় দুটি গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এমনভাবে তৈরি যে, দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো গতিরোধক রয়েছে। গতিরোধকগুলোর দুই পাশে ছোট দুটি লাল নিশান রয়েছে। তবে সেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই, কেন লাল নিশান দেওয়া হয়েছে। কারণ গতিরোধকের বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী গতিরোধকে সাদা রং করার কথা, কিন্তু সাদা রং নেই সেখানে। যে কারণে চালকরা আগেভাগে বুঝতে না পারায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
হারুয়া এলাকার গতিরোধকে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও রুহুল আমিন নামে ইজিবাইক চালক জানান, প্রতিদিনই কেউ না কেউ এই গতিরোধকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গতিরোধকগুলো মানুষের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হলেও এগুলোই এখন মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় মহাসড়ক থেকে গতিরোধকগুলো অপসারণ করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জেব্রা ক্রসিং এবং গতিরোধক সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতেই দুর্ঘটনা কমবে বলে দাবি তাদের।
ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পালের ভাষ্য, যেখানেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, সেখানেই গতিরোধক নির্মাণের দাবি ওঠে। আসলে গতিরোধক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো সমাধান নয়। সবার আগে দরকার সচেতনতা। আর প্রয়োজন অনুসারে গতিরোধক দিলেও তার আগে অবশ্যই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেওয়া আবশ্যক। যেন চালকদের দূর থেকেই এগুলো চোখে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুছ ছালামের সঙ্গে। সমকালকে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহাসড়কে গতিরোধক দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় স্থানীয়দের দাবিতে চারটি গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর একবার সাদা রং দেওয়া হলেও বৃষ্টিতে উঠে গেছে। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে স্থায়ী রং দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যা দু-চার দিনের মধ্যেই শেষ হবে। এ ছাড়া গতিরোধক সাইনবোর্ড তৈরির অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তৈরি হলে উভয় পাশে চোখে পড়ার মতো করে বসানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান জানান, মহাসড়কের ওপর গতিরোধকগুলোতে দ্রুত রং এবং সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপনের জন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো
হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন অচিরেই এগুলো বাস্তবায়ন হবে।
- বিষয় :
- সড়ক