ভাগ্য ফেরেনি শ্রমিকদের বন্ধ হয়নি লোকসান

.
হাসান হিমালয়, খুলনা
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২৩:৪৩
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি পাটকল গত দুই বছরে বিভিন্ন কোম্পানিকে ইজারা দিয়েছে সরকার। আরও দুটি পাটকলও ইজারার প্রক্রিয়া চলছে। একটি পাটকল নিয়ে মামলা থাকায় সেটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তাতে ভাগ্য ফেরেনি শ্রমিকদের। ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো চলছে না। বন্ধ হয়নি লোকসান।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) তথ্য বলছে, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে শ্রমিক ছিল প্রায় ৩৪ হাজার। ইজারায় চালু হওয়া চারটি পাটকলে বর্তমান কাজ করছেন ৩ হাজার ১৭০ শ্রমিক। পাটপণ্যের বাইরে দৌলতপুর জুট মিলে জুতা তৈরির কারখানাও করেছিল ফরচুন গ্রুপ। কিন্তু দুই মাস আগে সে জুতার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৪৫০ শ্রমিক।
পাটকল রক্ষায় তৈরি হওয়া সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি ইজারা প্রক্রিয়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মাধ্যমে পাটকল বাঁচানো বা পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই এগুলো চালু করা উচিত।
লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ১ জুলাই খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের ২৫টি পাটকল বন্ধ করে সরকার। ওই সময় খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোতে ৩৪ হাজার ১২১ শ্রমিক কাজ করতেন। বন্ধের পর সবাই চাকরি হারান। এ অঞ্চলের মানুষের আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার প্রথমে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ও পরে ইজারা দিয়ে বন্ধ পাটকল চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
ইজারার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর জুট মিলকে ফরচুন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করে বিজেএমসি। প্রতি মাসে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ভাড়ায় তারা পাটপণ্য উৎপাদন শুরু করে। ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ তারা কারখানায় স্বল্প পরিসরে শুরু করে জুতা তৈরি। সে কারখানার দুই ইউনিটে ৭০০ শ্রমিক কাজ করতেন। প্রায় দুই মাস আগে জুতার কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করা হয়।
গতকাল সোমবার দৌলতপুর জুট মিলে গিয়ে দেখা গেছে, পাটপণ্য উৎপাদন ইউনিটে অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করছেন। বেশির ভাগ তাঁত বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। জুতার কারখানায় ঝুলছে তালা। ফরচুন গ্রুপের আইনি পরামর্শক মাসুম বিল্লাহ বলেন, এখানে তৈরি শতভাগ জুতা রপ্তানি হতো। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সমস্যার কারণে রপ্তানি ও অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য কারখানা লে-অফ করা হয়েছে। বর্তমানে পাটপণ্য অংশে ১৪৮ শ্রমিক কাজ করছেন। তবে কাঁচা পাটের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পাট ইউনিটও সংকটে রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক টন পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। গত দুই বছরে আমাদের পাটপণ্য ইউনিটেই লোকসান হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ৩ মে জেজেআই জুট মিলের ইজারা বুঝে নেয় আকিজ গ্রুপ। তারা সেখানে পাটপণ্য উৎপাদন করছে। প্রতি মাসে ভাড়া ১৫ লাখ টাকা। এই পাটকলে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। জানা গেছে, যতগুলো পাটকল ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এটিই ভালো চলছে। জেজেআই জুট মিলে প্রকল্পপ্রধান আবুল কালাম জানান, আকিজ গ্রুপ নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। তারা দৈনিক ৬৫ থেকে ৭০ টনের মতো পণ্য উৎপাদন করছে। বন্ধের আগে সর্বোচ্চ ১৫ টন উৎপাদন হতো।
গত ১৬ জুন সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্ট জুট মিল ইজারা নেয় মাহাবুব গ্রুপ। প্রতি মাসে ভাড়া ৫০ লাখ টাকা। পাটকলটি এখনও তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, ইজারা দেওয়া ছয়টির মধ্যে চারটি কারখানা পুরোদমে উৎপাদন চালাচ্ছে। প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিল ইজারার দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আলিম জুট মিল নিয়ে মামলা থাকায় সেটি ইজারা দেওয়া হবে না।
প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, ৩৪ হাজার শ্রমিকের জায়গায় এখন কাজ করছেন তিন হাজারের মতো। তাদেরও নামমাত্র মজুরি দেওয়া হয়। ইজারার ফলে মালিকদের ভাগ্য খুলেছে, তারা ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে, ভাড়া ছাড় পেয়েছে; কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
- বিষয় :
- শ্রমিক