ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর

প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র হয় না নিউমুরিং টার্মিনালে

প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র  হয় না নিউমুরিং টার্মিনালে

ফাইল ছবি

 সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২৩:৪৯

চট্টগ্রাম বন্দরের ৪৪ শতাংশ কনটেইনার এককভাবে পরিচালনা করে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই টার্মিনালে সাত বছর ধরে প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্র হচ্ছে না। ২০১৮ সালের পর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে ছয় মাসের জন্য ১৩ বার দরপত্র দেওয়া হয়েছে এনসিটিতে। শুধু সাইফ পাওয়ার টেককেই এভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১২ বার। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে এখন ড্রাইডকের মাধ্যমে এনসিটি পরিচালনা করবে নৌবাহিনী। 

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ডিপিএম হচ্ছে প্রতিযোগিতাহীন একটি অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতি। যখন কোনো উপায় থাকবে না তখন জরুরি প্রয়োজনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা। তবে বছরের পর সবচেয়ে বড় টার্মিনাল এমন অস্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতাহীন পদ্ধতিতে ব্যবহার করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে খরচ ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে।    
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি-চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি এম সিকান্দার হোসেন বলেন, ‘বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনালে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র না হওয়া দুঃখজনক। ৪৪ শতাংশ কনটেইনার যে টার্মিনাল হ্যান্ডল করে, সেখানে কেন ডিপিএমের মতো অস্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতাহীন পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়– বোধগম্য নয়।’ 
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বিশেষ কারণে এক বা দু’বার ডিপিএম পদ্ধতিতে কার্যাদেশ দিলে এমন বিতর্ক তৈরি হতো না। ২০১৮ সালের পর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র না হওয়ায় আমাদের পণ্য পরিবহন খরচও কমছে না। স্বচ্ছতাও ফিরছে না বন্দরের কার্যক্রমে।’

২০০৭ সাল থেকে সাইফ পাওয়ার টেক এনসিটি পরিচালনা করলেও সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে অংশ নেয় তারা। সেবার টার্মিনালটির চার জেটিকে দুই প্যাকেজে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুটি প্যাকেজে তখন ৯৯ কোটি টাকার কাজ পায় তারা। তিন বছরের এই কার্যকাল শেষ হয় তাদের ২০১৮ সালে। এর পর থেকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় আর কখনও দরপত্র ডাকা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরে। ডিপিএম অর্থাৎ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ছয় মাস মেয়াদে বারবার কাজ দেওয়া হয়েছে সাইফ পাওয়ার টেককে। আওয়ামী লীগ আমলে সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ১১তম বারের মতো সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এর মেয়াদ শেষ হয় গত ৭ জানুয়ারি অর্ন্তবর্তী সরকারের আমলে। এ সরকার তখন একই পদ্ধতিতে মেয়াদ বাড়িয়ে আস্থা রাখে সেই সাইফ পাওয়ার টেকের ওপরেই। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া এভাবে এবার কাজ দেওয়া হয়েছে নৌবাহিনীকে। 
গত ১৭ বছরে চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালের কাজও পেয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ছয় বছরের জন্য প্রায় ৩০৪ কোটি টাকায় টার্মিনালটি পরিচালনার কাজ পায় তারা। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী নভেম্বরে। তবে দরপত্রের মাধ্যমে এ টার্মিনালে কাজ করছে তারা। 

সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রেও আমরা এনসিটির কাজ পেয়েছি। আমরা দক্ষতার প্রমাণ দিতে পেরেছি বলেই আমাদের ওপর বারবার আস্থা রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্ত্রণালয়ের সব নিয়ম মেনেই বন্দরে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এনসিটি ও সিসিটিতে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি কনটেইনার এককভাবে হ্যান্ডল করেছি।’ 
তিনি বলেন, ‘দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে বন্দরে কাজ করছি বলে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তারা নানা বদনাম ছড়ায়। ডিপিএম, নাকি অন্য পদ্ধতিতে কার্যাদেশ দেওয়া হবে, সেটা বন্দর ঠিক করে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। তবে উন্মুক্ত দরপত্র হলে আরও বেশি প্রতিযোগিতা থাকত।’ 
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বিশেষ কারণে ডিপিএম পদ্ধতিতে দরপত্র দিতে হচ্ছে এনসিটিতে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই আমরা এভাবে কার্যাদেশ দিয়েছি। একক কোনো সিদ্ধান্তে বন্দর এটা কখনোই করেনি।’

আরও পড়ুন

×