পদ্মায় পানি কমছে, বেড়েছে সাপ আতঙ্ক

পদ্মা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে -সমকাল
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ | ০০:০৭ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ | ০০:৫৭
অবশেষে পদ্মায় পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার পর শুক্রবার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করে।
শুক্রবার বিকেলে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ২ সেন্টিরমিটার পানি কমে। রাতে আরও ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে পদ্মায় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শনিবার সকাল থেকে আবারও পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে পদ্মার অন্যতম শাখা মাথাভাঙ্গা নদীর পানিও। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। পানিবাহিত রোগসহ এলাকায় ব্যাপক ভাবে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই পানিতে ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। ভারত থেকে বন্যার পানির সঙ্গে এসব সাপ ভেসে বাংলাদেশে আসছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এতে দুর্ভোগের সঙ্গে সাপ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পানিবন্দি মানুষের মাঝে।
বন্যাকবলিতরা জানান, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৮ গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গত ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। বাড়িঘরে পানি উঠে আসায় বিষাক্ত সাপও ভেসে আসছে। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঘরের চালায়, গাছপালায় ও পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে।
চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় সাপ দেখা যাচ্ছে। দিনের আলোতে সাপগুলোকে দেখা গেলেও রাতের অন্ধকারে কখন ঘরের মধ্যে চলে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই রাতের বেলায় সাপের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি দৌলতপুরের বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। মানুষের মধ্যে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারিভাবে ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে শনিবার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে দুই হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরন করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপারের স্ত্রী শারমিন আক্তার, এডিশনাল এসপি এসএম আল বেরুনী ও দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আরিফুর রহমানসহ জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার সংসদ সদস্য আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ দৌলতপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনামের সঙ্গে সাক্ষাত করলে প্রতিমন্ত্রী বর্ন্যাতদের জন্য তাৎক্ষণিক ১০০ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেন।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চিড়া, বিস্কুট, তেল, নুডুলস সম্বলিত ৬ হাজার প্যাকেট ও ২২ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার মেট্রিকটন শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনি ও রোববার সেগুলো বিতরণ করা হবে।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, আমি চরাঞ্চলের মানুষ। তাদের দুঃখ-দুর্দশা আমি ভাল করে বুঝি। তাই ২৪ ঘণ্টা বন্যার্তদের তদারকি করা হচ্ছে। প্রতিদিনই বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ত্রাণ ও দুযোগ প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ১’শ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেন। দু’এক দিনের মধ্যেই এগুলো বিতরণ করা হবে।