পুঁতিতে গড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ৩২ নম্বরে

বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কর্মকর্তার হাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি হস্তান্তর করেন সুনামগঞ্জের পুঁতিশিল্পী কাউছার আলম - সমকাল
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ | ১৫:০৪
পুঁতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গড়েছেন সুনামগঞ্জের পুঁতিশিল্পী কাউছার আলম। একটিই স্বপ্ন তার- মানুষ দীর্ঘদিন দেখতে পাবে, এমন কোনো স্থানে রাখা হোক এই পোর্ট্রেট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার জানিয়েছেন, পুঁতির এ পোর্ট্রেট প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এলে যে কক্ষে বসেন, আপাতত সেখানে রাখা হয়েছে। তিনি এখানে এলে সেটি দেখে যেখানে রাখার নির্দেশ দেবেন, সেখানেই রাখা হবে। পোর্ট্রেটে বসানো ডিভাইসের সুইচ টিপলেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শোনা যায়। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগগাঁও গ্রামের ইছাক মিয়া ও হালেমা খাতুনের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান কাউছার আলম তিন বছর ধরে পুঁতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এ প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। গত ১৬ মার্চ এটি নিয়ে তিনি গণভবনে যান। সেখানকার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাকে সেখানে পাঠিয়ে দেন। পোর্ট্রেটটি এখন সেখানেই রয়েছে।
কাউছার আলম জানান, গত পাঁচ বছর ধরে পুঁতি দিয়ে আল্লাহর নামসহ বিভিন্ন নামফলক, ফুলদানি, টিস্যু বক্স, কলমদানি, ব্যাগসহ ৩০ রকমের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করছেন তিনি। নারীদের জন্য ছোট একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে তার। ২০১৮ সালে পুঁতি দিয়ে মানুষের পোর্ট্রেট করার চিন্তা করেন তিনি। প্রথমেই তিনি ভাবেন, তার স্বপ্নের পুরুষ, বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোর্ট্রেট করবেন। যদিও প্রথম দেড় বছর কাজ করে কোনো সাফল্য আসেনি। কিন্তু তিনি হতাশ হননি। মুজিববর্ষ সামনে রেখে রাতদিন খেটেছেন এবং এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট তৈরির কাজে সফল হয়েছেন।
কাউছার চেয়েছিলেন, পোর্ট্রেটটির কাজ শেষ করে সেটি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেবেন। এ জন্য তিনি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ অনেকের সহায়তা চান। কেউ কেউ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এ প্রচেষ্টা তুলেও ধরেন। সুনামগঞ্জের সন্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদরুল আলম চৌধুরী আগ্রহ নিয়ে কাউছারকে জানান, তিনি কাউছারকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তিনি কাউছারকে পোর্ট্রেটটি নিয়ে ঢাকায় যেতে বলেন।
রাজধানীতে গিয়ে তিন দিন ধরে চেষ্টার পর ১৬ মার্চ গণভবনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কাউছারের। নিরাপত্তা কর্মকর্তা কাউছারকে জানান, করোনার জন্য এখন আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়। তিনি কাউছারকে পরামর্শ দেন তার এই শিল্পকর্ম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের জাদুঘর কর্মকর্তাদের কাছে দিতে, যাতে করোনার পর সেখানে গেলে প্রধানমন্ত্রী সেটি দেখতে পারেন। পরে নিরাপত্তা কর্মকর্তাই তার সঙ্গে জাদুঘরের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেন।
কাউছার আলম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার পোর্ট্রেটটি রেখে তাকে বলেন, এর বিনিময়মূল্য কত টাকা; এর বিনিময়ে আমি কী চাই। আমি বলেছি, কিছুই চাই না, শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার করব, এটি যেন দীর্ঘদিন মানুষ দেখে, সেই ব্যবস্থা করা হোক। কাউছার জানান, তার তৈরি দ্বিতীয় পোর্ট্রেটটি মরমি কবি হাছন রাজার।
কাউছার জানালেন, তার বাবা সবজি বিক্রেতা। বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করে পুঁতির শিল্পকর্ম বানিয়ে ও বিক্রি করে সামান্য যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালাতে বাবাকে সহযোগিতা করেন তিনি। শহরতলির মুসলিমপুর গ্রামে ছোট একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১০-১২ জন আগ্রহীকে তিনি এ কাজের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি শহরের মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অফিস সহায়কের চাকরি করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, করোনাজনিত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির অফিসে এখনও আসেননি। কাউছারকে তা জানানোও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পোর্ট্রেটটি যেখানে রাখার নির্দেশ দেবেন, সেখানেই রাখা হবে।