ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাচ্ছি, কেউ জোর করেনি’

‘স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাচ্ছি, কেউ জোর করেনি’

দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে জাহাজে ভাসানচর যাচ্ছেন আয়শা বেগম- সমকাল

সাহাদাত হোসেন পরশ, চট্টগ্রাম থেকে

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ২৩:৪৬ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ০০:৩৮

চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী সাতটি জাহাজ। শুক্রবার সকালে এসব জাহাজ ছেড়ে গেছে। এসব জাহাজে যারা ভাসানচর যাচ্ছেন তাদের কেউ জোর করেনি, বরং স্বেচ্ছায় সেখানে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হওয়া আয়শা বেগমের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। ২০ বছর আগে তার বাবা-মা বাংলাদেশে আসেন। এ দেশেই তার জন্ম, এরপর কক্সবাজারের বাসিন্দা নুর হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

নুর-আয়শা দম্পতির দুই মেয়ে। মেয়ে মরিয়মের বয় ১১ বছর, রিয়া মনির বয়স ৪ বছর। নুর বাঙালি হওয়ায় ভাসানচর যাচ্ছেন না, তবে আয়শা তার মা আরফা বেগম এবং দুই সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে।

আয়শা বেগম বলেন, আমাদের কেউ জোর করেনি, স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাচ্ছি। শুনেছি সেখানে স্কুল, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন সুবিধা আছে। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে পারবে। খেলাধুলা করতে পারবে। সেখানে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে, এজন্য ভাসানচর যাচ্ছি।

মায়ের সঙ্গে ভাসানচর যাচ্ছে ছোট্ট শিশু- সমকাল

আয়শার মতো আরও আনেক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকার তাদের জন্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করায় তারা সেখানে যাচ্ছেন।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয় সাতটি জাহাজ। বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্থানীয় প্রশাসন তাদের এসব জাহাজে তুলে দেয়। তার আগে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মালপত্রও জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে 'চল চল ভাসানচর চল' লেখা সংবলিত ব্যানার লাগিয়ে রোহিঙ্গা-বহরের ৩৮টি বাস চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। রাতেই চট্টগ্রাম পৌঁছায় তারা। যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়া হচ্ছে এতকাল ধরে তারা অবস্থান করছিলেন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে।

দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে জাহাজে করে ভাসানচর যাচ্ছেন আয়শা- সমকাল

বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চরম নজিরবিহীন নৃশংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় দেশটি থেকে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসে। মাঝে দুই দফায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া সফল হয়নি। মূলত মিয়ানমার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বহুদিন ধরেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা বসবাস করে আসছেন। সেখানে চাপ কমানোর জন্য আপাতত সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×