প্রতি রাতেই পড়ছে কুয়াশা
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থার আশঙ্কা

আসজাদ হোসেন আজু, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৬:৫৯
শীত মৌসুম শুরু হতেই ঘন কুয়াশার কারণে দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে ৩১ ঘন্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। এতে একদিকে যেমন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, অপরদিকে অসহনীয় দূর্ভোগের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
বিআইডব্লিউটিসি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহের সোমবার (৭ ডিসেম্বর) মৌসুমের প্রথম ঘন কুয়াশায় এক ঘন্টারও বেশি সময় ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকে। এর পরের দিন মঙ্গলবার দিবাগত রাতে টানা ১০ ঘন্টা, বুধবার দিবাগত রাতে টানা ১২ ঘন্টা ও বৃহস্পতিবার টানা ৮ ঘন্টারও বেশি সময় ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। এতে উভয় ঘাটে বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাকসহ শত শত গাড়ি নদী পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। ঘাট এলাকায় পারাপার হওয়া যানবাহন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার না থাকায় কনকনে শীতে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও শ্রমিক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হওয়ায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকের জট সৃষ্টি হয়ে শ্রমিকদের দূর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছায়।
বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়, শীত মৌসুমে প্রায় প্রতি রাতেই কুয়াশার প্রকোপে এ রুটের সিগন্যাল বাতি, মাকিং বয়া অস্পষ্ট হয়ে উঠলে ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন গাড়ির চালকসহ হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হন। সূত্রমতে, এক ঘন্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকলে এক লাখ টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হয়। এই নৌরুটে বিভিন্ন কারণে ব্যহত হচ্ছে যানবাহন পারাপার। এর উপর শীত মৌসুম শুরু হয়ে প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশায় ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকছে। আগামীতে এ সমস্যা আরো প্রকোপ আকার ধারণ করার শঙ্কা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটের গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া অংশে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ৬টি ঘাট থাকলেও বর্তমানে পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়ায় ঘাটের কাছে পল্টুন উঁচু হওয়ার কারণে ১, ২ ও ৬ নম্বর ঘাট পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট সচল থাকলেও ঘাটের পল্টুনের তুলনায় এ্যাপ্রোচ সড়ক উচু হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই পণ্যবোঝাই ট্রাক উল্টে বন্ধ থাকছে ঘাট। এদিকে এই নৌরুটে চলাচলকারী ১৮টি ফেরির মধ্যে প্রায় সময়ই ৩ থেকে ৪টি ফেরি বিকল থাকছে। এ ছাড়াও পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নদীপথের চ্যানেল সরু হয়ে পড়েছে। রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। যে কারণে ফেরিগুলোকে খুব সাবধানে পরিচালনা করতে হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী আলমগীর হুসাইন বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সবগুলো ঘাটই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পল্টুনগুলো যেভাবে উঁচু হয়েছে, গাড়ি উঠানো ও নামানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি মাঝে মধ্যেই পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে বাসের উপরে পড়ে যাওয়া ও আহতের ঘটনা ঘটছে। গত সপ্তাহেও ৫ নম্বর ঘাটে একটি ট্রাক উল্টে একটি বাসের উপরে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচের ৪০ যাত্রী।
যশোরের বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকের চালক আব্দুল করিম বলেন, এই ঘাট দিয়ে পার হতে গেলে সারা বছরই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে স্রোত ও ভাঙ্গন এবং শীত মৌসুমে কুয়াশায় বন্ধ থাকে ফেরি। এই ভোগান্তির শেষ কোথায় জানা নেই।
নদীর নাব্যতা সংকট ও ঘাট সমস্যার ব্যপারে বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, এ বছর হঠাৎ করে দ্রুত সময়ে পদ্মার পানি কমে গেছে। এ ছাড়াও নদীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ডুবোচর তৈরি হয়েছে। নাব্যতা সংকট দূর করতে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ খনন কাজ অব্যহত রেখেছে। আর দ্রুতই ৫ নম্বর ঘাটটি সংস্কার করা হবে। নদী ভাঙ্গনে দৌলতদিয়ার ঘাটগুলো ভেঙ্গে কাছাকাছি চলে আসায় যথাযথ টার্নিংসহ অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যাবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, দৌলতদিয়ায় অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশায় ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকা। কুয়াশা একটি প্রাকৃতিক সমস্যা। এতে কারো হাত নাই। ফেরি বন্ধ থাকায় লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগ বাড়ছে। তবে দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে অগ্রাধীকার ভিত্তিতে পার করা হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
- বিষয় :
- ঘন কুয়াশা
- শীত
- দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া
- যানবাহন পারাপার