ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

‘জিন তাড়াতে’ ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে মারপিট

‘জিন তাড়াতে’ ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে মারপিট

আহত বৃদ্ধা (বাঁয়ে) ও ভণ্ড কবিরাজ

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৫:২১ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ০৫:৫২

বৃদ্ধা রুপভান বেগমের (৭০) ঘাড়ে ‘জিন’ আছে। তাই তার নাতি প্রায় ২ মাস ধরে নিয়মিত খাবার খাচ্ছে না। এমন রোগ সারাতে হলে আগে রুপভানের ঘাড় থেকে ‘জিন’ তাড়াতে হবে। এরপর জিন তাড়াতে ভণ্ড কবিরাজ সিমা খাতুন (২৮) তার চিকিৎসা শুরু করেন। প্রথমে কাচি ও পরে লাঠি দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন বৃদ্ধা রুপভানকে। এমন নির্যাতনের ফলে বৃদ্ধার পুরো শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারপাখিয়া গ্রামে। কথিত ভণ্ড কবিরাজ সিমা খাতুন ওই গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে।

কবিরাজের নির্যাতনের স্বীকার উপজেলার ফারাসপুর গ্রামের জমির শেখের স্ত্রী বৃদ্ধা রুপভান বেগম জানায়, তার মেয়ের ছেলে ঠিকমত খাবার খাচ্ছে না বলে এক সপ্তাহ আগে কবিরাজ সিমা খাতুনের বাড়িতে যায় সে। কবিরাজ এ কথা শুনে বলে, রুপভানের ঘাড়ে জিন আছে। তারপর তাকে মারধর শুরু করে। বৃদ্ধা তার ঘাড়ে কোনো জিন নেই বললেও ছাড়েনি সিমা। সে প্রথমে ২টা কাঁচি দিয়ে তার শরীরে আঘাত করতে থাকে। এরপর লাঠি দিয়েও মারধর করে। এতে রূপভানের সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধেছে। বৃদ্ধা রুপভান বলেন, পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছিল। এর জন্য ওই কবিরাজকে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।

সরেজমিনে কবিরাজ সিমা খাতুনের বাড়িতে গেলে সে জানায়, তার ঘাড়ে জিন সবসময় থাকে না। যখন জিন আসে তখন তার মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসা দেয় সে। আর রোগী আসার পর তার ঘাড়ে ভর করা জিন বলে দেয় চিকিৎসা বাবদ কত টাকা লাগবে। যখন কেউ কথা শোনে না, তাকে মারধরও করে জিন।

জিন কিভাবে তাড়িয়ে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিমা বলেন, 'বিভিন্ন ঝাড়ফুক ও মন্তর দিয়ে জিন তাড়াই।'

এসব কথা বলার এক পর্ষায়ে সাংবাদিকদের সামনেই ভণ্ড কবিরাজ সিমার ঘাড়ে ‘জিনের’ আগমন ঘটে। এ সময় মুখ নাড়া দিয়েই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর উচ্চস্বরে বলেন, 'আপনাদের কোনো কথা থাকলে আমার সঙ্গে বলেন। কেউ তদন্ত করতে পাঠালে সেটাও আমাকে বলতে হবে। কারণ, কোনো রোগী অন্যায় কাজ করলে তাকে আমি শাস্তি দেই।' পরে সাংবাদিকরা কয়েকদিন আগে বৃদ্ধা রুপভানকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ভণ্ড কবিরাজ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। 

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ রনি লস্কর জানান, কথিত কবিরাজ সিমা খাতুন ফারাশপুর গ্রামের বৃদ্ধা রুপভান বেগমকে জিন তাড়ানোর নামে মারধর করেছে। বৃদ্ধার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। তিনি ওই বৃদ্ধাকে দেখেও এসেছেন। অভিযোগ পেলে কথিত কবিরাজ সিমা খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন

×