ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

প্রার্থীদের 'অর্থহীন' প্রতিশ্রুতি ভুল বার্তা দিচ্ছে ভোটারদের

প্রার্থীদের 'অর্থহীন' প্রতিশ্রুতি ভুল বার্তা দিচ্ছে ভোটারদের

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ১৫:০৬

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুসারে সিটি করপোরেশনের মূল কাজ নগর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, রাস্তাঘাট ঠিক রেখে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা। সিটি করপোরেশন থেকে জনগণ কী কী সেবা পাবে, তাও নির্ধারণ করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের এখতিয়ারভুক্ত কাজের মধ্যে আছে নতুন হোল্ডিং নম্বর প্রদান ও ট্যাক্স গ্রহণ, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে রেজিস্ট্রি, রাস্তা খননের অনুমতি, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত তৈরি, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তিপত্র প্রদান, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, পার্ক এবং খেলার মাঠবিষয়ক সেবা প্রদান। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ বলছেন, বন্দর সম্প্রসারণ করে বেকার সমস্যা দূর করবেন। কেউ বলছেন, চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত ও যানজটমুক্ত করবেন। আবার কেউ বলছেন, চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর কিংবা ইংল্যান্ডের আদলে গড়ে তুলবেন। বিশিষ্টজন বলছেন, এসব প্রতিশ্রুতি ভোটারদের ভুল বার্তা দিচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশাও অহেতুক বাড়িয়ে দিচ্ছে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, 'মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশের সিটি করপোরেশন আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। কী কাজ তারা করতে পারবেন, কী কাজ করার এখতিয়ার তাদের নেই- এটি জানেন না তাদের অনেকেই। আবার জানলেও কেউ কেউ ভোটারদের খুশি করতে আশ্রয় নেন মিথ্যার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে না, তখন জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে ভোটাররা ভুল ধারণা পোষণ করবেন।'

গত ১২ জানুয়ারি ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'আমি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত করব; চাঁদাবাজমুক্ত করব; করব দুর্নীতিমুক্ত।' আবার নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে গত ১৪ মার্চ নগরীর গোসাইলডাঙ্গা ও উত্তর-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে নৌকার এই প্রার্থী বলেন, 'নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধিতে কাজ করব আমি। চট্টগ্রামকে গড়ে তুলব সিঙ্গাপুরের আদলে।'

এখতিয়ারবহির্ভূত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও। গত ১৩ জানুয়ারি গোসাইলডাঙ্গা ও দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করে আমি বেকার সমস্যা দূর করব। স্থানীয় সব মানুষের চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।' স্থগিত হওয়ার আগে গত ১২ মার্চ ১৩ নম্বর খুলশী ও ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করব আমি। এই নগরকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তর করব।'

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা এম এ মতিন গত ১১ মার্চ ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে বলেন, 'চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। ইংল্যান্ডের নাগরিক সেবার আদলে সিটিজেন জার্নালিজম সেবা চালু করব। যাতে করে তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক সেবা পায় জনগণ।' তিন দিন আগে আগ্রাবাদ এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে তিনি আবার বলেন, 'চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত ও যানজটমুক্ত করব।' মেয়রদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিন গণসংযোগে গিয়ে বলছেন, 'এলাকায় হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গড়ে তুলব।' অন্যদিকে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সাবের আহমেদ বলছেন, পুরো এলাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করবেন তিনি। দূর করবেন বেকারত্বও। এই ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুল আলম বলছেন, নিজ উদ্যোগে ১১ তলার কাউন্সিলর ভবন করবেন তিনি। দখলমুক্ত করবেন ফুটপাত।

প্রার্থীদের এমন এখতিয়ারবহির্ভূত প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রসঙ্গে নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ূয়া বলেন, 'এখতিয়ারবহির্ভূত নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অহেতুক বাড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আইনের মধ্যে থেকে এখতিয়ারভুক্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত প্রার্থীদের।'

আরও পড়ুন

×