মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি রাজাকারপুত্র!

বৃহস্পতিবার কমলনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। ছবি: সমকাল
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ | ১০:১০
সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরের কমলনগরেও চলছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম। তবে এখানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে রাজাকারপুত্রকে সভাপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তারা একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এতে আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, কমলনগর উপজেলার ৪২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে ২১ জনের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে; আরও ২১ জনের যাচাই-বাছাই আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ২৫ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি মনোনীত করে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি তালিকা পাঠায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, নীতিমালা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের উপজেলা কমিটিতে যুদ্ধকালীন কমান্ডার অথবা ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে সভাপতি করার কথা থাকলেও মোস্তাফিজুর রহমান সেই ক্যাটাগরির কেউ নন। এমনকি তিনি একজন 'বিতর্কিত' মুক্তিযোদ্ধা। তা ছাড়া তার বাবা আবদুল গফুর তহশিলদার পিস কমিটির চেয়ারম্যান এবং রাজাকারদের সংগঠক এবং চাচা আবদুল হালিম রাজাকার ছিলেন। মূলত রাজাকার বাবা ও চাচাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই 'গুপ্তচর' হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাও করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. সফিক উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান, আবুনুর সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী, মো. নাছির ও আব্দুল অদুদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ উপজেলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একাধিক মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও 'রাজাকারের' সন্তান এবং 'বিতর্কিত' মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি মনোনীত করা খুবই লজ্জাকর। ওই কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান তারা।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিহিংসাবশত তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তা ছাড়া রাজাকার ইস্যুতে তার বাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।