ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

আট মাস ধরে পলাতক ইউপি চেয়ারবম্যান, নাগরিক সেবা ব্যাহত

আট মাস ধরে পলাতক ইউপি চেয়ারবম্যান, নাগরিক সেবা ব্যাহত

হাবিবুর রহমান হাবিব

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ০৫:১০

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ৭ নং বড়ইউড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব দু’টি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ ৮ মাস যাবত পলাতক রয়েছেন। ফলে, ইউপি অফিসে নাগরিক সেবা নিতে আসা প্রত্যাশীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

জানা যায়, বিগত ২০২০ সালের ২২ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ার ভাঙ্গা ইউপির শিবগঞ্জ বাজারের পাশে উমরপুরের এম এ খালেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বানিয়াচং উপজেলার ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের হলদারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক কামাল মিয়াকে (৩৫ কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে দুইদিন পর নিহত কামালের স্ত্রী রাজনা আক্তার বাদি হয়ে বানিয়াচং উপজেলার ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে এলাকায় মিছিল, মিটিংসহ মানববন্ধন পালন করেন এলাকাবাসী। তারপর থেকেই চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব চলে যান আত্মগোপনে। চেয়ারম্যান হাবিবের অনুপস্থিতিতে ভেঙ্গে পড়ে নাগরিক সেবাসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় অনিয়ম ও দুর্নীতি।

অভিযোগ আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে বিভিন্ন রেজুলেশন ও নানা কাগজপত্রে সিল ও স্বাক্ষর করছেন পলাতাক চেয়ারম্যান হাবিব। বিষয়টি দৈনিক সমকালকে নিশ্চিত করেছেন এই ইউনিয়নের সচিব শাহাজাহান আহমেদ। চেয়ারম্যান হাবিব লুকিয়ে স্থান বদল করে এসব স্বাক্ষর করছেন বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে সুচতুর হাবিব তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বদল করে অন্য নম্বর ব্যবহার করছেন। কয়েকদিন পরপরই তিনি নম্বর পরিবর্তন করেন। ফলে তাকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ দিকে চেয়ারম্যান হাবিবের অনুপস্থিতিতে ঠিকমতো ইউপি সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। স্থানীয় কয়েকজ জানান, চেয়ারম্যান না থাকার কারণে জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে খুব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কিছু দিনের ভিতরেই আমরা এলাকাবাসী মিলে বানিয়াচং উপজেলার ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। কারণ কামাল হত্যা একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সবাই তা জানেন।

এক ইউপি সদস্য জানান, পলাতক থেকেও ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব ঠিকই কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, আমাকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করলেও অফিসের সার্বিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। দেওয়া হয়নি কোনো নির্বাহী ক্ষমতাও। উল্টো চেয়ারম্যান হাবিব সশরীরে পরিষদে উপস্থিত না থেকেও আইন লঙ্ঘন করে অজ্ঞাত স্থান থেকে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। উপর মহলকে হাত করেই নাকি এসব করছেন পলাতক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব।

এলাকাবাসী জানান, থানায় হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে হাবিবের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ-২০০৯ এর ৪০ ধারায় উল্লেখ আছে, বছরে চেয়ারম্যানরা তিন মাস ছুটি নিতে পারবেন। তবে যথাযথ কারণ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এর অনুমোদন নিতে হবে। অথচ মার্ডার মামলার আসামি বড়ইউড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তা অনুসরণ না করেই দীর্ঘ আট মাস ধরে পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পলাতক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিবের একাধিক মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তা বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আছে ঠিক। কিন্তু এখনও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে কোনো বাধা নাই। আপাতত দেখভাল করতে আমাদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটা মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক তওহীদ আহমদ সজল সমকালকে বলেন, এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো কাগজপত্র নাই। পরে দেখে বলতে হবে। চেয়ারম্যান হাবিব যেহেতু পলাতক, কীভাবে সে বিভিন্ন রেজুলেশনে সিল-স্বাক্ষর দিচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।

আরও পড়ুন

×