সম্ভাবনা
অষ্টগ্রামের পনিরের কদর বাড়ছে

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পনির-সমকাল
সাইফুল হক মোল্লা দুলু
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ | ১৫:২৯
জেলার অষ্টগ্রামের পনিরের কদর দেশ-বিদেশে দিন দিন বেড়েই চলছে। করোনা অতিমারির সময়ও হাওরের অলওয়েদার সড়ক অতিক্রম করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীরা পনির ছাড়া গন্তব্যে যেতে চাচ্ছেন না। জিভে জল আনা সুস্বাদু পনির বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও।
কিশোরগঞ্জের হাওরের পরিচিতি এখন দেশ-বিদেশে। বিশেষ করে হাওরবাসীর স্বপ্নের অলওয়েদার সড়ক বাস্তবায়নের পর হাওর হয়ে উঠেছে পর্যটনের এক অনন্য স্থান। হাওরের রানীখ্যাত অষ্টগ্রাম উপজেলা পনিরের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
অষ্টগ্রামে পনির বানানোর প্রচলন হয় বহু বছর আগে। দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করা জেলার এই ব্র্যান্ডিং পণ্যটি এখন হয়ে উঠেছে গোটা কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। এ পনিরের কদর এখন সর্বত্র। অলওয়েদার সড়কের কল্যাণে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসায় পনির হয়ে উঠেছে অপার সম্ভাবনার এক শিল্প।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের খাদ্য তালিকায়ও রয়েছে এই পনির। কয়েক বছর আগেও এর কারিগর ও ব্যবসায়ী ছিল হাতেগোনা। গত দুই বছরে চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় কারিগর ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অষ্টগ্রামে পনির তৈরি হয়ে আসছে। মোগল আমলে অষ্টগ্রামে আসা দত্ত পরিবারের হাত ধরে এখানে পনির তৈরি শুরু বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
ষাটের দশকে অষ্টগ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই তৈরি করা হতো পনির। সে সময় উপজেলায় পনির ব্যবসায়ী ছিলেন ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো। তাদের তৈরি পনির সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যেতো।
এখানে অলওয়েদার সড়ক নির্মাণ হওয়ার পর থেকে হাওরের অপরূপ সুষমা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক আসছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকছে অষ্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার পনির। এছাড়া অনলাইনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পনিরের অর্ডার আসে। পনিরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর কারিগর ও ব্যবসায়ীও বেড়ে গেছে।
পনিরের কারিগরদের একজন এসএম নিশান তার বাবার পেশাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার তৈরি পনিরই এখন মাঝেমধ্যে যায় রাষ্ট্রপতির খাবার টেবিলে। নিশান বলেন, কয়েক বছর আগে পনিরের চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল। বর্তমানে পনিরের ব্যাপক চাহিদা। প্রায় প্রতিদিন এখন পনির বানাই এবং বিক্রি করি। নিশান আরও জানান, রাষ্ট্রপতি অষ্টগ্রামে এলে এসএসএফসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিনি পনির তৈরি করেন। তার তৈরি পনির রাষ্ট্রপতি ও অতিথিদের খাবারের তালিকায় থাকে। আবার রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে ফেরার সময় তার তৈরি পনির নিয়ে যান। বঙ্গভবন থেকে সেই পনির যায় গণভবনেও।
আলাপকালে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, কয়েক বছর আগেও পনিরের ব্যবসার দুরবস্থা ছিল। তাই কয়েকজন পনির ব্যবসায়ী ঢাকার নবাবপুর, মোহাম্মদপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামে গিয়ে পনির ব্যবসা করছেন। তারা জানান, বর্তমানে গরুর দুধের দাম বৃদ্ধি, হাওরে চাইল্যা ঘাঁসের অভাবসহ নানা কারণে আগের অবস্থা আর নেই। ট্রাক্টরসহ নানান কৃষিপ্রযুক্তির কারণে স্থানীয়ভাবে গরু-মহিষের চাহিদা কমে যাওয়াতে দুধের জোগানও কমে গেছে।
অষ্টগ্রামের পনিরের খ্যাতি সম্পর্কে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীও অষ্টগ্রামের পনির খেয়েছেন। এ পনির রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
যেভাবে তৈরি হয়: প্রথমে একটি বড় পাত্রে দুধের সঙ্গে তেঁতুল মিশ্রিত টক পানি ও স্বাভাবিক পানি রাখা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে দুধ জমাট বাঁধতে শুরু করে। এ সময় হাত দিয়ে মিশ্রণ নাড়াচাড়া করতে হয়। পরে তা চাকু দিয়ে কেটে ছোট ছোট পিস করা হয়। এরপর পানি থেকে তুলে পনির ছোট ছোট অংশে বাঁশের টুকরিতে রাখা হয়। টুকরিতে রাখা অবস্থায় পনির থেকে পানি চুঁইয়ে পড়তে থাকে। পানি পড়া শেষ হলে পনিরে ছোট ছোট ছিদ্র করে লবণ দিয়ে রাখা হয়। লবণ দেওয়ার পর তা ইচ্ছামতো আকারে প্যাকেটে পুরে বা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রায় ১০ লিটার দুধ থেকে এক কেজি পনির পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পনির ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
- বিষয় :
- সম্ভাবনা
- অষ্টগ্রাম
- পনির
- অষ্টগ্রামের পনির