ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

লকডাউন: রংপুরে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

লকডাউন: রংপুরে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

লকডাউনে রংপুরের শহীদ মুখতার এলাহী চত্বর এলাকা। ছবি-সমকাল

রংপুর অফিস

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২১ | ০৪:৫৬ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২১ | ০৬:২৬

সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও রংপুরে কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। ঘর থেকে অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষদের ঘরে ফেরাতে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ। অহেতুক ঘোরাফেরা করা মানুষদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও গুণতে হয়েছে।

এদিকে লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক শ্রমজীবি মানুষ। তারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে খাদ্য সহযোগিতা না পেলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুরে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবারের চেয়ে কম মানুষ দেখা গেছে নগরীতে। 

প্রশাসনের কড়া নজরদারি 

নগরীর সিটি বাজার ছাড়া অন্য কোথাও সাধারণ মানুষের তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হননি। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, খাবারের হোটেল ও ফার্মাসি ছাড়া শুক্রবার সব দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এছাড়া দিনভর সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাবও পুলিশের টহল ছিল। 

শুক্রবার সকালে নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্ত্বর, সাতমাথা, মাহিগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা। এ সময় মাস্ক না পড়ায় ও বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয় এবং অনেককে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

রংপুর জেলায় ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মাঠে কাজ করছে। এর মধ্যে রংপুর নগরীতে ৮ জন এবং বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় একজন করে দায়িত্ব পালন করছেন। 

এছাড়া ৮ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) লকডাউন কার্যকর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। 

রংপুর নগরীতে ১টি ও ৮ উপজেলায় ৮টি সেনাবাহিনীর দল টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। ১টি দলকে রিজার্ভ অবস্থায় রেখেছে সেনাবাহিনী। বিজিবির ২ প্লাটুন জনবলকে ৪টি ভাগে বিভক্ত করে সকালে ২টি দল ও বিকেলে ২টি দল রংপুর নগরীতে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া র্যা ব ও পুলিশের টহল টিম জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে।  

‘কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই’

লকডাউন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন রংপুরের শ্রমজীবীরা। কাজ হারিয়ে এখন তারা খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাও করছেন।

রংপুর নগরীর আশরতপুরের শ্রমজীবি আজাদ মিয়া (৪৫) সমকালকে বলেন, ‘সরকার দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কাজ নেই। আমি দিন এনে দিন খাই। খাবার কিংবা টাকা সঞ্চয় করতে পারি নাই। হয়তো আরও দু-একদিন কোনরকম চলতে পারবো। এরপরে কি করবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি। সরকারি সাহায্য না পেলে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

ভ্যানচালক নগরীর মাহিগঞ্জ বড়দরগা তালতলার জাহাঙ্গীর (৫৩) বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ, তাই আমার উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের উচিত সকল খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা হয়।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রংপুর জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমজীবিদের কেউ খাদ্য সংকটে থাকলে আমাদের জানালে তাৎক্ষনিক তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা আসলে কর্মহীনদের তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।’

করোনা সংক্রমণের চিত্র 

রংপুর বিভাগে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। লকডাউনের মধ্যেও কমেনি সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। 

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম সমকালকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে করোনায় মারা গেছে ৮ জন। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের ১ জন, লালমনিরহাটের ১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ২ জন ও দিনাজপুরের ৪ জন রয়েছে।

 এ নিয়ে রংপুর বিভাগে করোনায় মারা গেলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শতকরা শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৭৯ ভাগ। 




আরও পড়ুন

×