ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চরফ্যাসনে ট্রলারডুবি: ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি ২০ জেলের

চরফ্যাসনে ট্রলারডুবি: ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি ২০ জেলের

নিখোঁজ ফারুক হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম রাস্তার পাশে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন- সমকাল

ভোলা ও চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৯:১৫ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৯:১৫

ভোলার চরফ্যাসনের ঢালচরের সাগর মোহনায় মেঘনা নদীতে মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২০ জেলের সন্ধান মেলেনি দুই দিনেও। কোস্টগার্ড ও স্বজনরা পৃথকভাবে উদ্ধার অভিযান চালালেও খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের। চরফ্যাসনে নিখোঁজ জেলেদের বাড়িতে চলছে স্বজনের আহাজারি। বিলাপ করছেন অপেক্ষায় থাকা পরিবারের সদস্যরা। উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা। নিখোঁজ জেলেদের জীবিত না পেলে মরদেহ হলেও ফেরত চান স্ত্রী-সন্তানরা।

রোববার রাতে ভোলার চরফ্যাসন উপকূলের সাগর মোহনায় ট্রলিং জাহাজের (মাছ ধরার স্টিলের জাহাজ) ধাক্কায় মাছ ধরার ওই ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ২১ জেলে। এর মধ্যে হাফিজ আহমেদ নামে একজনকে পরদিন সোমবার বিকেলে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন অন্য ট্রলারের জেলেরা। নিখোঁজ থাকেন ২০ জন। 'মা শামসুন্নাহার' নামের ওই ট্রলারটির মালিক চরফ্যাসনের আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কামাল খন্দকার।

মঙ্গলবার দুপুরে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে উত্তর শিবা গ্রামে কামাল খন্দকারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বিলাপ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা তার বাড়িতে ভিড় করছেন খবরের আশায়।

কামালের বাড়ির পাশে জেলে ফারুক হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী সেতারা বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। সেতারা বিলাপ করে বলছিলেন, 'জানের ভিক্ষা চাই, আল্লাহ তুমি জানের ভিক্ষা দেও। ছোড মাইয়্যা দুইডা লইয়া অহন আমি কি করমু গো আল্লাহ?' মায়ের পাশে বসে কাঁদছিল ফারুকের দুই মেয়ে শাকিরা (১০) ও শাবনুর (৮)। ভাই নিখোঁজের খবরে জ্ঞান হারিয়ে বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফারুকের বৃদ্ধা বোন বকুল বেগমকে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি- সমকাল

ফারুকের বড়ির উত্তর পাশের নিখোঁজ মো. জাবেদের বাড়ি। চার মাস আগে বিয়ে করা জাবেদ স্ত্রী রাশিদাকে ঘরে রেখে সাগরে যান। ট্রলারডুবির কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। হাতের মেহেদি শুকানের আগেই স্বামী হারানোর আশঙ্কায় নির্বাক তরুণী রাশিদা ঘরের দরজায় বসে বসে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। জাবেদের বৃদ্ধ মা ফাতেমা বেগম বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছেন।

নিখোঁজ ২০ জেলের মধ্যে সাতজনের বাড়িই আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে। ফারুক হাওলাদার ও জাবেদের পরিবারের মতোই জসিম, খালেক, ইউসুফ, রফিক, মাকসুদের বাড়িতে চলছে বিলাপ-আর্তনাদ। নিখোঁজদের মধ্যে রসুলপুর ইউনিয়নের রয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন শাহিন, দিন মোহাম্মদ, সুমন, নাগর মাঝি ও মিজান। মানিকা ইউনিয়নে নিখোঁজ রয়েছে বাচ্চু মুন্সী, নুরে আলম, আলামিন, হারুন, নুরুল ইসলম। আরও নিখোঁজ রয়েছেন নীলকলম ইউনিয়নে ট্রলার মাঝি বাচ্চু ও আবুল বাশার এবং দৌলতখানের ১ জন।

ক্ষুব্ধ স্বজনরা অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার পর পর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও উদ্ধার তৎপরতা সঠিকভাবে হয়নি। এমন দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজ শুরু করা না হলে কাউকেই জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট শাফতাক হোসেন বলেন, ঘটনার পর পরই কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাসন থেকে ২টি টিম ও চট্টগ্রাম থেকে একটি জাহাজ এসে অভিযান পরিচালনা করছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে শামছুল মাঝি নিজ খরচে দুটি ট্রলার নিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে নদীতে গেছেন।

চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান জানান, কোস্টগার্ডের একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×