যশোরে ফের আলোচনায় শাহীন চাকলাদার

জয়নাল আবেদীন
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৩:৩৮
দেশজুড়ে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যে যশোরে ফের আলোচনায় শাহীন
চাকলাদার। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ
সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মাত্র ১৬ বছর আগে একটি পৈতৃক ওষুধের
দোকান ছাড়া যার কিছুই ছিল না, এখন তার কী নেই। যশোরের লোকজন মজা করে বলেন,
যেদিকে যাবেন, সেদিকেই চাকলাদার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও নতুন করে তার
ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে
দুদকও খোঁজ নিচ্ছে। আর দলের ভেতর থেকেও দাবি উঠেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
গ্রহণের। এর আগে জাতীয় সংসদেও তার ব্যাপারে কথা বলেছেন স্থানীয় এমপি। তবে
বরাবরের মতো এবারও অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন শাহীন
চাকলাদার নিজে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, পিতার রেখে যাওয়া এম এম আলী সড়কে জামান
ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকান চালাতেন শাহীন চাকলাদার। ২০০১ সালে বিএনপি
ক্ষমতায় এলে ঠিকাদারির মাধ্যমে কিছু অর্থবিত্ত গড়েন। কখনই আওয়ামী লীগ এবং
এর অঙ্গ ও সহযোগী কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ২০০৩ সালে জেলা
আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পায় শাহীনের নাম। দলীয় নেতাকর্মীদের
চমকে দিয়ে পরের বছর গঠিত কমিটিতে তিনি সাধারণ সম্পাদক হন।
শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর মূলত একক
আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। সে লক্ষ্যেই দলীয় নির্দেশনা
উপেক্ষা করে পদে পদে জায়গা করে দিয়েছেন নিজের লোকদের। চিহ্নিত অপরাধীদের
নিয়ে গড়ে তুলেছেন আলাদা টিম, যাদের বণ্টন করে দিয়েছেন নানা দায়িত্ব। কেউ
জমি দখলের দায়িত্বে নিযুক্ত তো কেউ চোরাচালানে। কেউ চাঁদাবাজিতে, কেউ
টেন্ডার ছিনতাইয়ের কাজে; আবার কেউ আছেন জুয়ার আসর পরিচালনায়। শাহীনের
চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
শাহারুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল,
সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী এসব দলের নেতৃত্বে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়
আসার পর গত ১১ বছরে শাহীন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। কাজীপাড়ায় পৈতৃক
বাড়ির বাইরে বিভিন্ন স্থানে বানিয়েছেন অনেক দালানকোঠা। কাঁঠালতলায় তৈরি
করেছেন আলিশান আধুনিক তিনতলা বাড়ি এবং বড়বাজারে দোতলা বাড়ি। সম্প্রতি কিনে
নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী পারভীনা হোটেল। শহরের বিমান অফিসসংলগ্ন স্থানে রয়েছে
ভবনসহ জমি, আরবপুর মোড়ে পাঁচতলা বাড়ি, শহরের মাইকপট্টিতে হাজি সুমনের সঙ্গে
যৌথ জমি, রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট, পেট্রোল পাম্প, ধর্মতলায়
জমি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক নারীর জমি জালিয়াতি করে নিজের নামে লিখে
সেখানে বানিয়েছেন জাবীর ইন্টারন্যাশনাল নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট অভিজাত হোটেল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য যশোরে জাবীর
ইন্টারন্যাশনালকে লোকজন এক নামে চেনে। যশোরের সর্ববৃহৎ জুয়ার আসর পালবাড়ির
রয়েল কমিউনিটিতে, যেটি শাহীনের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। তার অনুসারীদের মাধ্যমে
শহর এবং শহরের আশপাশের এলাকায় অন্তত শতাধিক জুয়ার আসর বসার খবর পাওয়া
গেছে।
গত বছর সংসদে এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী
নাবিল আহমেদ। এর পর কিছুদিন জুয়ার আসর বন্ধ থাকলেও পরে চালু হয় আরও জোর
গতিতে, যা নিয়ন্ত্রণ করে ফন্টু চাকলাদার ও টাক মিলন।
তবে জুয়ার আসরের খবর অস্বীকার করেছেন যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক। তিনি
সমকালকে বলেন, যশোরে জুয়া বা ক্যাসিনোর কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই।
গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি মনিরামপুর ও শার্শায় অভিযান
চালানো হয়েছে। শহরের সবকিছু তাদের নজরদারিতে আছে বলে জানান তিনি।
শাহীন চাকলাদার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, তারা সাধারণত গোয়েন্দা নজরদারির
ভিত্তিতেই অভিযান চালিয়ে থাকেন। শাহীনের বিরুদ্ধে জুয়ার আসর কিংবা
চোরাচালানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এ মুহূর্তে যশোরের কোথাও জুয়ার আসর নেই বলে দাবি করেন কোতোয়ালি থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানও। তিনি বলেন, দেশজুড়ে
অভিযান শুরুর পর সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে যে
কোনো স্থানেই পুলিশ অভিযান চালাবে। শাহীন চাকলাদারের সিন্ডিকেট, জুয়ার
আসর, হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে জানতে চাইলে 'রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো
মন্তব্য করা সমীচীন নয়' বলে দাবি করেন তিনি।
যশোর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের কাছে তার কমিটির সাধারণ
সম্পাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি চান, যশোরে
যেন জুয়ার আসর না থাকে, কেউ যেন সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে
না পারে। তিনি বলেন, প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে
পারে।
শাহীনের হাত ধরে দলে অনেক বিতর্কিত নেতা :১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যশোরের একাধিক মুক্তিবাহিনীর বাড়ি পুড়িয়ে
দিয়েছিলেন আবদুল খালেক। তিনি বর্তমানে যশোর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আরেক
সহসভাপতি এ কে এম খয়রাত কিছুদিন আগেও ছিলেন জামায়াতের রোকন। ১৯৯৬ সালে
ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম বর্তমানে যশোর আওয়ামী লীগের বন ও
পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। পাঁচ বছর আগের আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হত্যা মামলার
আসামি এস এম আফজাল হোসেন এ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপি পরিবারের দু'জন
জিয়াউল হাসান হ্যাপি উপপ্রচার সম্পাদক এবং মইনুল আলম টুলু কোষাধ্যক্ষ।
রোকেয়া পারভীন ডলির স্বামী স্থানীয় বিএনপি নেতা।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে জায়গা পান ছাত্রলীগ
নেতা রিপন হত্যা মামলার আসামি শাহারুল ইসলাম, বিএনপি নেতার ছেলে নাজমুল
হাসান কাজল, বিএনপি পরিবারের সদস্য আবদুল মান্নান মিন্নু, মশিয়ার রহমান
সাগর ও কবিরুল আলম। গত ২০ বছর লন্ডনে অবস্থানরত শওকত আলী ও মালয়েশিয়ায় আদম
পাচারে পরিচিত শাহীন সরদারও এ কমিটির সদস্য।
যশোর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা সমকালকে বলেন, যেভাবে দেশজুড়ে ক্যাসিনো
চলছে, সেভাবেই এ ধরনের লোকজন দলে গুরুদায়িত্ব পেয়ে গেছেন। এখনই সময় তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। যারা প্রশ্নবিদ্ধ লোকদের আওয়ামী লীগের নানা পদে
আসীন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, দলের যে কোনো
দুঃসময়ে যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, তারা উপেক্ষিত। যাদের বিরুদ্ধে
মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন
বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করেছেন, তাদেরকেই বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন শাহীন
চাকলাদার। নিজের অনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পরিচালিত করতেই বিতর্কিতদের
দলীয় পদে বসিয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।
কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের ঠাঁই পাওয়া প্রসঙ্গে যশোর আওয়ামী লীগের সভাপতি
বলেন, দলীয় সভানেত্রী চাইলে শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা
নিতে পারেন। এ বিষয়ে তার কিছুই করার নেই।
দখলবাজি :যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অন্যের জায়গাজমি বেদখল করে নেওয়ার অভিযোগ
আছে শাহীনের বিরুদ্ধে। তার প্রভাব খাটিয়ে চাচাতো ভাই পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম
চাকলাদার রেন্টু, কাউন্সিলর হাজি সুমন, চুড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান
মুন্না, কাউন্সিলর মোস্তফা, ইউপি চেয়ারম্যান সাগর, ইউপি চেয়ারম্যান
শাহারুল, কাউন্সিলর সন্তোষ দত্ত, টাক মিলন, বিহারি ক্যাম্প এলাকার রবি
নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখল করেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরের প্রাণকেন্দ্রে একটি জমি দখলদারদের হাত থেকে
ফিরে পেতে শাহীনের কাছে গিয়েছিলেন স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা আনোয়ারা বেগম।
কিন্তু জমি ফেরত পাওয়ার বদলে উল্টো ফেঁসে যান তিনি। শাহীন ওই নারীর জমি
হাতিয়ে নেন। পরে মাত্র ১০ লাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের
জমিটি নিজের নামে লিখে নেন শাহীন। সম্প্রতি সেই জমিতে গড়ে তুলেছেন ১৬
তলাবিশিষ্ট অভিজাত হোটেল। এর পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের বড়
একটি অংশ জোর করে দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি শাহীন চাকলাদারের দখলবাজি নিয়ে একটি চিঠি পেয়েছে দুর্নীতি দমন
কমিশন (দুদক)। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যশোরের মাইকপট্টি এলাকায় সেলিমের মার্কেটের একটি
অংশ, ভোলা ট্যাংক রোডে আল্লাহর দানের একটি অংশ, কাঁঠালতলা এলাকায় ঈদগাহের
একটি অংশ, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি, মাহিদিয়া
এলাকায় প্রায় ১০০ বিঘা বিলের জমি, জগহাটি এলাকার বিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, যশোর-নড়াইল সড়কে বীজ গোডাউনের
সামনে সওজের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, শহরের ঘোষপাড়ায় সাধন কুমার
নামে এক ব্যক্তির প্রায় ১৫ কাঠা জমি দখলের অভিযোগ আছে। শাহীন নিজে এবং তার
লোকজন এসব দখলবাজিতে জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিলাম হলে আশপাশেই ভিড়তে পারেন না অন্য কেউ।
জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস,
পাসপোর্ট অফিস, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং কোচিং সেন্টারও শাহীনকে
নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য। শাহীনের পৃষ্ঠপোষকতায় তার ক্যাডাররা খুনোখুনিতে
পর্যন্ত জড়িত হয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অগণিত হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার
অভিযোগ আছে।
অনৈতিক কর্মকাণ্ডে একদল ক্যাডার :জানা গেছে, পুরাতন কসবা এলাকায় বিভিন্ন
অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন। তার
নেতৃত্বে ফিরোজ আলম, আলমগীর হোসেন, নূর নবী, কাজল, সোহাগ, বাবুল, সিরুবাবু,
হাতকাটা মনিরুল, উজ্জ্বল, জিয়াদ, রাজ্জাক, সান্টু, মকা, কালাম, সোহাগ-২,
মারুফসহ অনেকে সেখানে সার্বক্ষণিক তৎপর।
শহরতলি পাগলাদহ এলাকায় রবি, ভাস্কর্য মোড়ে নান্নু, আরবপুরে সাইদুজ্জামান
ওরফে দাঁতাল বাবু ও বিশে, ধর্মতলা ও খড়কি এলাকায় হাফেজ, ভুট্টো, ডিকু ও
শাওন, আরএন রোড এলাকায় কানা রুবেল, বারান্দি এলাকায় ইয়াবা জাকির ও অস্ত্র
আরিফ, রেলস্টেশন এলাকায় শাকিল, কুদরত, তরিকুল ও সাইদুল, শংকরপুর এলাকায়
ডেঞ্জার সোহাগ, বনি, বাপ্পী, ইসহাক, ডাবলু, শামিম, শাহাদত ও ইয়াসিন, উপশহর
এলাকায় মুনসুর, চিমা ও সেলিম, শেখহাটি এলাকায় মোমেল ও জুয়েল, লালদীঘি
এলাকায় চিকি সুমন ও সাইফুল, রেল রোডে রতন, টিবি ক্লিনিক এলাকায় ট্যাবলেট
তুষার, বেজপাড়ায় প্রশান্ত, খায়ের ও সোহাগ, ঘোপ এলাকায় ফারাজি, বারান্দি
মোল্লাপাড়ায় বাঁধন ফারাজি, পলাশ ও লিটন, বরফকল এলাকায় মোস্ত, খালধার রোড
এলাকায় চোর শাকিব, মুড়লিতে নাসির, পুলেরহাট এলাকায় মামুন, হাসান, আজিজুল,
মামুন, ভুট্টো, বাবু, বক্কার, টিটো, টাক জনি, স্বপন ও টোকন, ঝুমঝুমপুর
এলাকায় কসাই জাভেদ ও রবিউল, জামরুলতলা এলাকায় জুয়েলের নেতৃত্বে হয় সব ধরনের
সমাজবিরোধী কার্যক্রম।
চোরাচালান সিন্ডিকেটে যারা :জানা গেছে, যশোর শহরে এখন চোরাচালান সিন্ডিকেট
নিয়ন্ত্রণ করেন শাহীন চাকলাদারের অন্যতম সহযোগী ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল
ইসলাম, যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল
মান্নান মুন্না প্রমুখ। এর মধ্যে সোনা চোরাচালানের দিকটা নিয়ন্ত্রণ করেন
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, উপশহর ইউপি
চেয়ারম্যান এহসানুল হক লিটু, মুনসুর, ডিশ বাবু ও বেনাপোলের আকুল।
অস্ত্র চোরাচালান ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করেন ফন্টু চাকলাদার, টাক মিলন, হাজি
সুমন (কাউন্সিলর), গোলাম মোস্তফা (কাউন্সিলর), আরিফ, শাকিল, রবি, দাঁতাল
বাবু, মুনসুর, চিমা, সান্টু ও টালিখোলার জাভেদ।
যশোরে যে কোনো সরকারি দপ্তরের সব দরপত্র নিয়ন্ত্রণ হয় কাঁঠালতলা সিন্ডিকেট
থেকে। টেন্ডার হলেই সেসব অফিসে নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা করা হয় সিন্ডিকেটের
সদস্যদের দ্বারা। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ফন্টু চাকলাদার। তার সঙ্গে থাকে টাক
মিলন, হাজি সুমন, আলমগীর, বিপুল, শাহী প্রমুখ।
মাদক চোরাচালান ও বিক্রির দায়িত্বে নিযুক্ত আছে ইয়াবা জাকির। এ ছাড়া শাহী,
জিসান, কাজল, জিয়া, রহমত, প্রান্ত, সোহাগ ও মনু এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
শহরের প্রবেশমুখ চাঁচড়া, চুড়ামনকাটি, উপশহর, মণিহার, মুড়লি, রাজারহাটসহ
শহরের ভেতরে প্রতিটি মোড়ে এরা বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে
বলে জানা গেছে। এমনকি রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইকও চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পায় না।
শাহীন চাকলাদারের বক্তব্য :সমকালের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে অভিযোগগুলো
অস্বীকার করেন শাহীন চাকলাদার। জুয়ার আসর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের
কর্মকাণ্ড তিনি ঘৃণা করেন। তার রাজনৈতিক উত্থান জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে
বলেন, 'আমি একসময় জামায়াতের সেক্রেটারি ছিলাম। এখন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি
হয়েছি। তাতে কোনো সমস্যা আছে?'
বিতর্কিতদের দলে জায়গা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিতর্কিত কাউকেই পদ দেওয়া
হয়নি। খয়রাত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রেজাউল আওয়ামী লীগের মাঠকর্মী ছিলেন।
শাহীন নিজেও যুবলীগের নানক-মির্জা আজম কমিটির সদস্য ছিলেন বলে দাবি করেন।
জমি দখল, সিন্ডিকেট এবং চোরাচালান বিষয়ে জানতে চাইলে একটি জাতীয় দৈনিকের
উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, 'যশোরে চাকলাদারই সব- এমন শিরোনাম দিয়ে নিউজ
করেছিল। কিছুই হয়নি। মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারা মাফ চাওয়ায় আর
করিনি।'
- বিষয় :
- আলোচনায় শাহীন চাকলাদার