ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ধনী দেশগুলোর

জলবায়ু: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশের ৩ দফা সুপারিশ

.

আবু সালেহ রনি, দুবাই থেকে

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫:১০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫:৩৩

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচের ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জিওগ্রাফির একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্রবল গরম ও খরার মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ। প্রবল উষ্ণায়ন ও স্থলভাগে পানির সংকট- এ দুই কারণে পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দশ গুণ বাড়বে। কার্বন নিঃসরণও সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে। এতে অর্থনীতিও প্রভাবিত হবে। ধনীরা আরও ধনী হবেন এবং গরিব আরও গরিব হবেন। এমন প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি।

গত চারদিনে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এবারের জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৮) ৫৭ বিলিয়ন ডলার তহবিলে জমা হয়েছে। গতকাল সোমবার সম্মেলনের পঞ্চম দিনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন কপের প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের। তিনি এই তথ্য জানিয়ে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমাদের গুরুত্ব সহকারে সহযোগিতা করার এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে সংহতি প্রয়োজন।’

এবারের জলবায়ু সম্মেলনের প্রথমদিনে ৪২৩ মিলিয়ন ডলার তহবিলে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশগুলো। 

এদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার জন্য বিশ্বের সব দেশকে বাস্তবসম্মত জাতীয় লক্ষ্য (এনডিসি) নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশসহ দেশি-বিদেশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিশ্রুতি ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের বকেয়া পরিশোধেরও দাবি জানিয়েছেন।
জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংযুক্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশি সংগঠন ইকুইটিবিডি আয়োজিত ‘এলডিসি-এমভিসি পিপলস এক্সপেকটেশন  অ্যান্ড কপ২৮’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিএসআরএল’র সম্পাদক মো. জিয়াউল হক মুক্তা, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা, এওএসইডির নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, প্ল্যাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট (পিডিডি) সমন্বয়কারী অ্যাটলে সোলবার্গ, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) সিও মিসেস সামাহ হাদিদ এবং এশিয়া প্যাসিফিক মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি) প্রেসিডেন্ট মিস লিডি ন্যাকপিলসহ আরও অনেকে। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির পরিচালক আমিনুল হক। তিনি প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘এই চুক্তিতে কার্বন উদগীরণ কমানোর মনিটরিং এবং রিপোর্টিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।’ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পর্যায়ক্রমে শূন্য নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের পিছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করায় তিনি কপ২৮ প্রেসিডেন্সির সমালোচনা করেন। 

তিনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: ১. উন্নত দেশগুলিকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুসরণ করতে হবে এবং ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ২. তাদেরকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ক্রমবর্ধিত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। ৩. ডিসকোর্স অব নিউ অ্যান্ড কালেক্টিভ ফাইন্যান্সকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং ঋণ-বহির্ভূত পদ্ধতি দিয়ে তৈরি করতে হবে। ৪. ন্যাপ বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাকে হতে হবে গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশনের অংশ।

মো. শামসুদ্দোহা প্রশমনের বর্তমান প্রক্রিয়াটিকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেন। তিনি বাধ্যতামূলক সময়সীমাসহ দীর্ঘমেয়াদী প্রশমন কৌশল প্রণয়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যা কম কার্বন নির্গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসবে এবং যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকবে। তিনি সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ফলাফলের ভিত্তিতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যের সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় পরিকল্পনা নিশ্চিত করার দাবি জানান। 

লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পাবলিক ফাইন্যান্স সংকটের আবর্তে আছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বেসরকারি খাতের ওপর তাদের অত্যধিক নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। এই নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে খুব কমই কাজে লাগছে এবং এবং প্রায়শই বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। আমাদের জরুরিভিত্তিতে সরকারি অর্থায়নের ওপর নজর দিতে হবে, যা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য এবং সকলের মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিবে।’

তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যমান ব্যবস্থায় কার্যকর কোনো পরিবর্তন ছাড়া ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন’ মন্ত্র সম্পূর্ণ অবাস্তব।
অ্যাটল সোলবার্গ বাস্তচ্যুতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ, এটি বিশ্বজুড়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাই, যা দেশগুলোকে স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে বাস্তুচ্যুতদের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হবে।’ 

শামীম আরফিন বলেন, ‘অর্থের যথেষ্ট যোগান আছে। শুধু সেই অর্থকে দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করতে বিশ্বনেতাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।’ 

সামাহ হাদিদ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা এবং এসব অঞ্চলে সম্পদ ও অর্থায়নের অভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় দুর্বল দেশগুলোকে অভিযোজনে সক্ষম করতে এবং জলবায়ু সহিষ্ণু করে তুলতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

জিয়াউল হক মুক্তা গত রোববার জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বিষয়ে কপ প্রেসিডেন্সির বিবৃতির জোরালো বিরোধিতা করার আহ্বান জানান কপে অংশ নেওয়া সকল রাষ্ট্রপক্ষকে। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্সির এই বিবৃতি জলবায়ু বিজ্ঞান এবং জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিল ফান্ড গঠনের মৌলিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক।’

ডেঙ্গুরোগসহ ভেক্টর-বর্ণ ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী: বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এক দিনের জন্য একটি বিশেষ হেলথ ডে (স্বাস্থ্য দিবস) উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার আমন্ত্রিত প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে আয়োজিত সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। ডেঙ্গুরোগসহ অন্যান্য ভেক্টর-বর্ণ ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। এই জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো দায় এড়াতে পারে না। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি কমিয়ে নিতে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করতে হবে, পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

এদিন সকালে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত ‘লঞ্চ অব এশিয়ান ডেভলপমেন্ট  ব্যাংক এলইড ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোয়েটিভ’ শিরোনামে গোল টেবিল বৈঠকেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী অংশ নেন। তিনি বৈঠকে  জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যসেবায়  কি ধরনের ক্ষতি হয় এবং কীভাবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যায়, তা তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রোগ্রাম (৫ম সেক্টর প্ল্যান) নামে আরেকটি বৈঠকে অংশ নিয়ে জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এরপর বিকেলে স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ক্লাইমেট হেলথ মিনিস্টারিয়াল শীর্ষক আরেক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। 

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তিনটি সুপারিশ দেন। ১. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানানসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; ২. স্বাস্থ্যখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে; এবং ৩. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে। 

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট বক্তা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমও অংশ নেন।

বাংলাদেশে সৌর সেচের মাপকাঠি উন্নয়ন রোডম্যাপ উন্মোচন: জলবায়ু  সম্মেলনে বাংলাদেশে সৌর সেচের মাপকাঠি (২০২৩-২০৩১) রোডম্যাপ উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত সাইড ইভেন্টে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই রোডম্যাপ উন্মোচন করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। 

প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা এখন ক্লিন এনার্জির কথা বলছি। সৌর বিদ্যুৎ সহ কয়েকটা যায়গাতে আমরা এখন অনেক বেশি কাজ করছি। আমরা বর্তমানে ১০ থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। আরেকটি বড় জিনিস হচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৬ মেগাওয়াটের মতো বায়ু বিদ্যুৎ আমরা প্রায় বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। কিছুদিনের মধ্যে ৩০ মেগাওয়াটের মতো একটি প্রজেক্ট চলে আসবে। বায়ুবিদ্যুতে একটি বড় বিষয় হচ্ছে আমরা দিনে-রাতে সব সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আমরা আশপাশের দেশ থেকেও বিদ্যুৎ নেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে দূষণ তৈরি হয়, তা ৪০ শতাংশ কমাতে যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, তা বাস্তবায়ন করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমারা কার্বন কমাব, সেখানে থাকতে চাই না। কারণ, আমরা এখনো ১ শতাংশের নিচে কার্বন নিঃসরণ করি।’

রোডম্যাপ উন্মোচনের পর সিনিয়র সাসটেইনেবল এনার্জি এক্সপার্ট সিদ্দিক জোবায়ের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে সহযোগিতা করেন তিস্তা সোলার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম। প্রবন্ধে জানানো হয়, এই রোডম্যাপের উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং সেচ খরচ কমানো। এই রোডম্যাপের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার সৌর সেচ পাম্প ইনস্টল করার মাধ্যমে চার লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া, ১.৩ মিলিয়নের বেশি কৃষকদের উপকার করা। এর মাধ্যমে তিন লাখ টন ডিজেল খরচ বাঁচানো সম্ভব বলেও উল্লেখ করা হয় প্রবন্ধে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, এডিবির বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বক্তব্য রাখেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব নিরোদ চন্দ্র মন্ডল।

এদিকে বাংলাদেশে জাপানের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কলম্বিয়ান প্যাভিলিয়নে আয়োজিত এক সভায় সমালোচনা করা হয়েছে। সভায় দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল সভায় বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান জলবায়ু সংকটের মিথ্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এ দেশে একটি আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক শক্তির মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। এটি জাতির জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে চলেছে। বিশ্ব এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে লড়াই করছে। সেখানে বিজ্ঞান-ভিত্তিক যুক্তি এবং সুপারিশ উপেক্ষা করে বিদ্যুৎখাতে জাপানের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সাংঘর্ষিক।’ তিনি সরকারের পাশাপাশি জাপান সরকারকেও এই বিদুৎখাতের পলিসি সম্পূর্ণ সংশোধন দাবি করেন।

সবুজ অর্থায়নে এক ট্রিলিয়নের প্রতিশ্রুতি: সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যাংকস ফেডারেশন সবুজ অর্থায়নে এক ট্রিলিয়ন দিরহাম অর্থাৎ ২৭০ বিলিয়ন একত্রিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউএই ব্যাংকস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ আল ঘুরাইর সম্মেলনে বলেন, ‘কৃষকদের মাটির গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করাসহ জলবায়ু সুরক্ষায় সবুজ অর্থায়নে ব্যয় হবে।’

জলবায়ু সম্মেলন চলাকালেই মারাত্মক দূষণে দুবাই: এবারই প্রথম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যকে যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, স্বীকার করে নেওয়া হলো জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যের ওপরেও।

কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনের চতুর্থ দিনকে স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এই দিনটিতেই দুবাইয়ের আকাশে অস্বাস্থ্যকর ধোঁয়াশার চাদরে অস্পষ্ট হয়েছিল। 

আন্তর্জাতিক দূষণ ট্র্যাকার অনুযায়ী, বায়ুর গুণমান সূচক পিএম ২.৫ দূষণের প্রতি ঘনমিটারে ১৫৫ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছেছিল। এই তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বায়ুর গুণমান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হওয়ার ফলে ‘সবাই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করতে পারে; সংবেদনশীল গোষ্ঠীর সদস্যরা আরও গুরুতর স্বাস্থ্য প্রভাব অনুভব করতে পারে।’ 

দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিকদের বিক্ষোভ: উন্নত বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অনুদান নয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে দুবাইয়ে কপ২৮ সম্মেলনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিকরা। সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া মিট পয়েন্টের বাইরে ‘উই ওয়ান্ট ক্লাইমেট জাস্টিস’ লেখা ব্যানার হাতে দক্ষিণ এশিয়ার সাংবাদিকরা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেইঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরাম এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি ভারতীয় সাংবাদিক আশিস গুপ্তার সভাপতিত্বে মহাসচিব বাংলাদেশের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সম্রাট, নির্বাহী সভাপতি কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, ভাইস প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের রাবনেওয়াজ চৌধুরী, নেপালের শ্রীরাম সুবেদী, ইমরান ওয়াই চৌধুরীসহ আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।

আশিস গুপ্তা বলেন, ‘জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ন্যায্যতা নিশ্চিত করা না গেলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাইরেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আঞ্চলিক সমস্যাগুলোকে মিডিয়ায় তুল ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের এক্টিভিস্টদের মতো কাজ করতে হবে।’

রাবনেওয়াজ চৌধুরী পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে হলে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমরা দোষী না হয়েও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে চাই না।’

আসাদুজ্জামান সম্রাট বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগে প্রতি বছর ৪ লাখ লোক ক্লাইমেট রিফিউজি হয়। সাম্প্রতিক সময়ের ডেঙ্গু মহামারির জন্য তিনি জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করেন।’ 

তিনি বলেন, ‘এ কারণেই সম্মেলনে এবার স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পরে সম্মেলন কেন্দ্রের ব্লুজোনে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেইঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রেস মিটে দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্ববাসীর কাছে একটি দাবিনামা তুলে ধরা হয়।’

আরও পড়ুন

×