ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ আকাশ নিম বৃক্ষটি হুমকির মুখে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ আকাশ নিম বৃক্ষটি হুমকির মুখে

দুর্লভ প্রজাতির ‘আকাশ নিম’ গাছের কাটা ডালের গোড়ায় বেড়ে উঠছে নতুন কুঁড়ি

ড. আখতারুজ্জামান চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫ | ১৭:৩৯

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন জনঅরণ্য অধ্যুষিত ঢাকা মেগা সিটির ভেতর এক সবুজ নন্দনকানন। ২৭৫ একর জায়গাজুড়ে ক্যাম্পাসের এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বনজ, ফলদ, শোভাবর্ধক, ঔষধি ও দুর্লভ প্রায় ৭০০ প্রজাতির গাছগাছালি।

আপনি যদি দোয়েল চত্বর থেকে পশ্চিম দিকে যেতে থাকেন তাহলে মোকাররম ভবনের গেটের সিকিউরিটি গার্ডঘর সংলগ্ন ২০ মিটারের মতো উঁচু একটি বৃক্ষ দেখতে পাবেন। এটি ‘আকাশ নিম’ (বৈজ্ঞানিক নাম- Millingtonia hortensis এবং ইংরেজি- Indian Cork Tree) দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ। বর্তমানে সারাদেশে মাত্র কয়েকটি বৃক্ষ আছে। বৃক্ষটি সাধারণত ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ড সোজা, বাকল অমসৃণ, কর্কের মতো খসখসে। যৌগিকপত্র, পত্রফলক ৪-৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২-৩ সেন্টিমিটার চওড়া, অগ্রভাগ সরু, দু’পাশ খাঁজযুক্ত। ফুল গুচ্ছাকারে ফোটে, ছোট আকারের, দল মণ্ডল সাদা। বীজ চাকতির মতো। 

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন সংলগ্ন আকাশ নিম গাছের একাংশ

নভেম্বর-মার্চ মাসের দিকে ফুল-ফল ধরে। বাংলাদেশের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় দেখা যায়। আকাশ নিম শোভাবর্ধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভেষজ গুণাগুণও বিদ্যমান। বৃক্ষটির বাকল ও পাতা থেকে কারসিমার্টিন, নিরোলিডল, পেন্টাকোসান, লিনারিজেনিন লিনালুল নামক রাসায়নিক যৌগ পাওয়া যায়; যা ক্যান্সার ও হৃদরোগে উপকারী। তাছাড়া ফুল থেকে সংগৃহীত এসেনসিয়াল অয়েল ম্যাসাজ, এয়ার ফ্রেশনার ও অ্যারোমাথেরাপিতে পুরু বাকল এবং পানীয় বোতলের কর্ক বা ছিপি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

বৈদ্যুতিক তারের কারণে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ নিম গাছটির ডাল কাটা পড়ে। ঝোড়েও দু’একটি ডাল ভেঙে গেছে। ফলে বৃক্ষটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ আকাশ নিম বৃক্ষটি হুমকির মুখ থেকে বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে নতুন চারা রোপণ এবং দেশব্যাপী বিস্তার জরুরি।
 

/পোস্ট ডক্টর রিসার্চ ফেলো, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 
 

আরও পড়ুন

×