বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে মাঠে দুদক

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ | ০৯:২৪
স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার দুদক কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন অনুমোদন করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবরকে দুর্নীতির এই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অধিদফতরের আরও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।
আগামী ২০ অক্টোবর মেডিকেল এডুকেশন এন্ড হেলথ ম্যানপওয়ার ডেভেলপমেন্ট শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. নাছির উদ্দিন, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম আল মামুন ও ডা. মোস্তফা কামাল পাশার বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া আগামী ২১ অক্টোবর একই শাখার কম্পিউটার অপারেটর (আউট সোসিং) সুবাষ চন্দ্র দাশ, অফিস সহকারী মো. আলমগীর. অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দফতরের কম্পিউটার অপারেটর কাম-সাঁট মুদ্রাক্ষারিক লায়েল হাসানের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।
চলতি বছরের ১৯ জুলাই সমকালে 'কোটি টাকা লোপাটের ছক বিদেশ প্রশিক্ষণের নামে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে টাকা লোপাটের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। এরপরই দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণও পেয়েছেন সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯টি বিষয়ের আওতায় ৩১ প্যাকেজে ৪২৬ জনের নামে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। প্রশিক্ষনার্থীদের সম্মানী ভাতাবাবদ ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ টাকা, বিমান ভাড়া ২ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর বাইরে টিউশন, ইনস্টিটিউশনাল ও প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ব্যয় হিসেবে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৪৭২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সব মিলে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ২১ কোটি ৭২ লাখ ঊনত্রিশ হাজার ১৪৭ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার অথবা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পৃথক দেশের প্রতিষ্ঠান হলেও সবগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় একই ধরা হয়।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, প্রত্যেকটি দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক ও কর্মচারীসহ সব প্রশিক্ষাণার্থীদের জন্য সমপরিমাণ প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ব্যয় জনপ্রতি ৪ হাজার ডলার ধরা হয়েছে, যা বাস্তব সম্মত নয়। অথচ বিগত বছরগুলোতে একই প্রোগ্রামে গড়ে জনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার ডলার ব্যয় হতো। প্রশিক্ষণের নামে জনপ্রতি গড়ে ২ হাজার ডলার অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মানসম্মত নয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত পাঠানো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এই হুন্ডি চক্রের হোতা ডা. জাবেদ আল হাসান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টেনোগ্রাফার লায়েল হাসান। এ দুজনকে সরাসারি সহায়তা করেছে প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম আল মামুন ও ডা. মোস্তফা কামাল পাশা।
থাইল্যান্ডের একটি ইউনিভার্সিটিতে টাকা পাঠানোর অভিযোগ করে বলা হয়, থাইল্যান্ডের স্কুল অব গ্লোবাল স্টাডিজ, থমসট ইউনিভার্সিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য প্রশিক্ষণের টাকা পাঠানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। ওই প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি এসএম আলতাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি প্রোগ্রামটি পরিচালনা করছেন। এই আলতাব হোসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এপিএস ড. আরিফুর রহমান শেখের বড় ভাই। এছাড়া থাইল্যান্ডের পাইথাই নওয়ামিন হাসপাতাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধভাবে পিটিএম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। পিটিএম নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক বাংলাদেশি সরফরাজ নেওয়াজ জিউজ নামে এক ব্যক্তি।
এই চক্রটি প্রতি বছর বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে বিপুল অংকের সরকারি
অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সম্মতিতেই এসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলে
অভিযোগ করা হয়।
- বিষয় :
- স্বাস্থ্য অধিদফতর
- দুদক