ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ

প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চায় মন্ত্রণালয়

প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চায় মন্ত্রণালয়

আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ জুন ২০২২ | ২৩:৪৩

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগির এ নিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭৯তম সভায়।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স চূড়ান্ত না হলে যে কেউ যে কোনো বয়সে আবেদন করতে পারেন। ২০০৫ সালে ৮-৯ বছর বয়সীরাও স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা মামলা করলে হাইকোর্ট তাদের স্বীকৃতি বহাল রাখেন। এতে জনগণের কাছে মন্ত্রণালয় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে জামুকার সভায় প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চিঠিতে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। আইনিভাবে আদালতেও তুলে ধরব। আশা করছি, প্রধান বিচারপতি বিষয়টি অনুধাবন করবেন।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগেই বয়স জটিলতার সমাধান দরকার। আদালত হস্তক্ষেপ না করলে সাড়ে ১২ বছরের নিচে স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশ করব। মন্ত্রণালয় কোনো দায় নেবে না।

২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি এক পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংশ্নিষ্ট ব্যক্তির সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করা হলে ২০১৯ সালের ১৯ মে মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স সংক্রান্ত ওই পরিপত্র বাতিল করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে এ সংক্রান্ত লিভ টু আপিল (আপিল অনুমতি আবেদন) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

জামুকার ৭৯তম সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স নিয়ে পরিপত্র বহালের পক্ষে মত দেন আলোচকরা। পরে তাঁরা এ নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা, বাস্তবতা ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তিসহ প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত ১৮ মে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।

স্বাধীনতার পর সপ্তম দফা মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকার কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের সর্বনিম্ন বয়স? এ ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের তালিকায় (ভারতীয় তালিকা) যারা ছিলেন, সরকার তাদেরই স্বীকৃতি দেয়। সময়ের পরিক্রমায় অভ্যন্তরে অংশ নেওয়াদেরও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সর্বনিম্ন বয়সের নীতিমালা না থাকায় একাত্তরে ৮-৯ বছর বয়সী অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে যান।
তবে এ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে ২০১৬ সালে সর্বনিম্ন বয়স সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রণালয় বলে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার নূ্যনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। পরে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি পরিপত্রের মাধ্যমে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নূ্যনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস। ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সময় ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসানসহ ১৬ মুক্তিযোদ্ধা পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ১৮টি রিট করেন। রিটগুলোর ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেট ও পরিপত্র বাতিলের রায় দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ফ্রেমে বাঁধা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ মানুষ আবেগের তাড়না, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে করে। বয়স দিয়ে কখনও ভালোবাসা বাঁধা যায় না। ঐতিহাসিক দলিল, প্রমাণের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতে হবে।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৯ সালের ২৩ জুন 'নো অর্ডার' আসে। তবে আদালত লিখিত রায় প্রকাশের পর লিভ টু আপিলের অনুমতি দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে।

এ বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন সমকালকে বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ কার্যতালিকায় শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মন্ত্রণালয়ের লিভ টু আপিল।

আরও পড়ুন

×