বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ খুনি অধরা
বিদেশে বাড়ির সামনে আন্দোলনের পরামর্শ

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ খুনি । ফাইল ছবি
ওয়াকিল আহমেদ হিরন ও তাসনিম মহসিন
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২ | ১০:২৫
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে চেষ্টা চালালেও এখন পর্যন্ত একজনকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা গেছে। অধরাই থেকে গেছে আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। এ দু'জনের নিশ্চিত তথ্য বাংলাদেশের কাছে আছে। এ ছাড়া খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই। এদিকে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছে। খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সমকালকে বলেন, 'আমি সব সময় প্রবাসী ভাইদের বলি- খুনিদের বাড়ির সামনে গিয়ে মাসের পর মাস আন্দোলন করুন। ক্রমাগত আন্দোলন করলে রাশেদ চৌধুরীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। প্রবাসীরা চাপ সৃষ্টি করলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে হবে।' তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জার্মানির হিটলারের পতনের পর তার এক সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের সোমারভিলে বাস করত। মার্কিন ইহুদিরা এটি জানতে পেরে প্রতি শনিবার হিটলারের সহযোগীর বাসার সামনে সমাবেশ করতে থাকে। খুনি বলে স্লোগান দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করত তারা। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির নিশ্চিত খবর বাংলাদেশের কাছে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকা দুই খুনিকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যাদের হদিস পাওয়া যায়নি, তাদের সঠিক তথ্য পেতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর করা হয়। ২০২০ সালের ৫ মে আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮ সালে বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে দেশে আনা হয়। বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকলেও ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যে দু'জনের তথ্য বাংলাদেশের কাছে আছে, তাদের ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এ জন্য দেশভেদে ভিন্ন কৌশলও নেওয়া হয়েছে। আইনজীবী নিয়োগ করে, আবার বাংলাদেশিদের মাধ্যমে সংশ্নিষ্ট দেশের সরকারের ওপর চাপ তৈরির কাজ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। যখনই দেশটির সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তখনই বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। তবে দেশটির কাছ থেকে এ নিয়ে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিনিময় নিয়ে চুক্তি করতে চেয়েছিল কানাডার সঙ্গে। তবে এমন চুক্তি করতে রাজি নয় কানাডা। নূর চৌধুরী দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে, কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাধ্যমে সরকারকে চাপ দিতে কাজ করছে ঢাকা। সেই সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়াও চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ১৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরীর নথি তলব করেছেন দেশটির আদালত। এ ব্যাপারে মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো জানিয়েছে, রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা শুরু করেছে আইন বিভাগ। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় হারাতে পারে বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৫ সালে রাশেদ চৌধুরী রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার সময় তাকে নথিতে বেশ কিছু বিষয়ের উত্তর দিতে হয়েছিল। কোনো অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল কিনা, খুনের মামলার আসামি কিনা- এসব প্রশ্নে মিথ্যাচার করেছে রাশেদ চৌধুরী। তাই তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে বলেন, খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে আর কিছু এখন বলা যাবে না। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।