আন্দোলন নিয়ে ‘টি অ্যাসোসিয়েশন’
মজুরি ছাড়াও বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছেন চা শ্রমিকরা

ছবি- সংগৃহীত।
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২২ | ০৭:৫১ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২ | ০৮:০৪
শ্রমিকরা আন্দোলনের নামে দেশের চা শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশের চা শিল্প বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে। এরকম সময়ে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে এ খাতের ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে।’
‘এ শিল্প সবসময় শ্রমিক কল্যাণমুখী ছিল, এখনও আছে। মজুরির বাইরেও শ্রমিকদের বিভিন্ন খাতে ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। যেসব সুবিধা যোগ করলে এ খাতের শ্রমিকদের দৈনিক ৪০০ টাকার সমপরিমাণ মজুরি দাঁড়াবে।’ বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্যোক্তাদের এ অভিমত তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করা হচ্ছে। বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পান। প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, উপস্থিতি ভাতা এবং ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতার মাধ্যমে মোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ অর্থ দেওয়া হয়ে থাকে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন রকম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
দেশে বর্তমানে ১৬৮টি বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে দেড় লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।
খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে মাসে প্রতি শ্রমিককে ৪২ দশমিক ৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন হিসেবে দেওয়া হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪ হাজার ২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বণ্টন করা হয়েছে। ১৯০ বছরের পুরোনো এই শিল্পের প্রতিটি বাগানে অনেক আগে থেকেই শ্রম আইন অনুসরণ করা হচ্ছে।
শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। একজন শ্রমিকের বসতবাড়ির জন্য পরিবারপ্রতি এক হাজার ৫৫১ বর্গফুট করে বাড়িসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৮০০ বিঘা জায়গা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে ২টি বড় গ্রুপের ও ৮৪টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারসহ সর্বমোট ৮৯১ জন মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন। শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এক হাজার ২৩২ জন শিক্ষকের মাধ্যমে ৪৪ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা দেওয়া হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে। ২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। আর শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৯৪ দশমিক ২০ শতাংশ।