ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

পিকে হালদারের সহযোগীর প্রবাসী দুই মেয়ে গ্রেপ্তার

পিকে হালদারের সহযোগীর প্রবাসী দুই মেয়ে গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার দুইজন, ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২ | ২৩:০৯ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ০১:৩৭

ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

পিকে হালদারের সহযোগীর প্রবাসী দুই মেয়ে গ্রেপ্তার


সমকাল প্রতিবেদক


বিপুল অর্থ লোপাটে অভিযুক্ত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের সহযোগী খবির উদ্দিনের দুই মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বুধবার ভোরে দেশত্যাগের চেষ্টার সময় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৩ এর যৌথ দল এ অভিযান চালায়।

তারা হলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির ঋণ খেলাপি শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। বাবার মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তারা আত্মসাৎ করেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের মাধ্যমে তার দুই মেয়ে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নেন। তারা কানাডা প্রবাসী। প্রায় দেড় যুগ ধরে সেখানে অবস্থান করে শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তারা গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন। আজ (বুধবার) গোপনে কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়ার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম পিকে হালদার। তিনি দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের মধ্যে অন্যতম একজন। গত ১৪ মে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তাকে ভারতের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীকালে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি এর সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় বিজ্ঞ আদালত পিকে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করেন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি/শ্রেণির আমানতকারী রয়েছেন। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এই টাকার পুরোটাই পিপলস ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

তিনি বলেন, পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত  পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে তিনি প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ খেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেন। পরে র‍্যাব জানতে পারে,  প্রতিষ্ঠানের দুই ঋণ খেলাপি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ফলে র‍্যাব তাদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

এর আগে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে পিকে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই বছরের ১৬ মার্চ বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন পিকে হালদারের আরেক বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই।

আরও পড়ুন

×