ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কর্তৃপক্ষ নয়, গার্ডার দুর্ঘটনায় চীনা ঠিকাদার দায়ী

কর্তৃপক্ষ নয়, গার্ডার দুর্ঘটনায় চীনা ঠিকাদার দায়ী

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৭:৩৩ | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৭:৩৩

ক্রেন কাত হয়ে নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি-৩) গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় চীনা ঠিকাদারকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। 

রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তদন্তে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারি কর্তৃপক্ষের দায় পাওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার পর ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হলেও, দায় পাওয়ায় কী শাস্তি দেওয়া হবে- তা স্পষ্ট করে বলেননি সচিব। তিনি বলেছেন, শাস্তির সুপারিশ করা তদন্ত কমিটির কাজ নয়। তদন্ত প্রতিবেদন ঠিকাদারকে নিয়োগা করা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে (সওজ) পাঠানো হবে। সওজ চুক্তি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

তদন্ত কমিটি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে। চুক্তি ভাঙলে জরিমানা, চুক্তি বাতিল এবং কালো তালিকাভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান সমকালকে বলেছেন, ঠিকাদারকে নোটিশ করা হবে।

গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন যেখানে, বিআরটির সেই অংশের ঠিকাদার চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক সঙ্কটে চীনা এই ঠিকাদার কখনোই ঠিকভাবে কাজ করেনি। কাজ করার মতো পূর্ণ সামর্থ্য তাদের ছিল না। 

আমিন উল্লাহ নুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কম টাকায় কাজ নেওয়ায় খরচ বাঁচানোর চেষ্টা ছিল ঠিকাদারের। জনবলও ছিল অদক্ষ।

চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান। গত ১৮ আগস্ট আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। দুর্ঘটনার মামলায় ১০ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হলেও চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সওজ সূত্র জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্কের কারণে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেওয়া কঠিন। আবার ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হলে, উত্তরা-গাজীপুরের মতো ব্যস্ততম সড়কে বিআরটির নির্মাণ কাজ পাঁচ বছর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্দিন মোড়ের দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার সমকালকে বলেছেন, ৮ চীনা নাগরিকসহ ৪০ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ২১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে কার কী দায় তা বিস্তারিত এসেছে।

সড়ক পরিবহন সচিব জানান, ১২ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রধান কারণগুলো হলো- নিয়ম ভেঙে দিনের বেলায় গার্ডার স্থানান্তর, লাইসেন্সবিহীন হেলপার দিয়ে ক্রেন পরিচালনা, ক্রেন পরিচালনার স্থান ছিল অসমতল, ক্রেনে ডিজিটাল মনিটর ছিল না, কাজের অনুমতি ছিল না, ভারী কাজের সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে কেউ ছিল না, কর্মীরা অদক্ষ, সেফটি ইঞ্জিনিয়ারেরও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল না।

সচিব বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কাজ চলবে না। কাজ বন্ধ, এমন ঘোষণা হবে। এতে ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। থানায় একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। হাইকোর্টে রিট চলছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের চাওয়া, যারা মারা গেছেন, তাঁরা যেন ন্যায় বিচার পান।

আরও পড়ুন

×