ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বিদ্যুৎ সংকটে বেশিরভাগ সময় কারখানা বন্ধ

ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডারে চান সিএনজি স্টেশনের গ্যাস

ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডারে চান সিএনজি স্টেশনের গ্যাস

গ্যাস সংকট চরম আকার নিয়েছে। অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কারখানা চালু রাখতে সিএনজি স্টেশন থেকে গাড়ি বোঝাই করে সিলিন্ডার নেওয়া হচ্ছে। ছবিটি ঢাকার আশুলিয়া থেকে তোলা -সমকাল

হাসনাইন ইমতিয়াজ

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে বিপাকে উদ্যোক্তারা। দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকছে কারখানা। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি। এ পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস নিতে চান শিল্প উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন। সিএনজি স্টেশন মালিকরা বলছেন, সরকার অনুমতি দিলে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তাঁরা গ্যাস দিতে প্রস্তুত।

সূত্র জানায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে গ্যাসচালিত নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার) উৎপাদন করে কারখানা চালু রাখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সঠিক চাপে (১৫ পিএসআই) ক্যাপটিভে গ্যাস দিতে পারছে না তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো। এ কারণে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ অনেক এলাকার শিল্প মালিকরা সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস এনে কারখানা চালু রাখছিলেন। ৬০, ৯০ ও ১৩০ লিটার ধারণক্ষমতার সিলিন্ডার ভ্যানে বসিয়ে সাধারণত গ্যাস নেওয়া হয় বাসাবাড়ি ও খাবার হোটেলগুলোতে। এ ছাড়া অনেক সময় কারখানার জন্য কাভ্যার্ড ভ্যানে ৫০ থেকে ১০০টি সিলিন্ডারে গ্যাস নেওয়া হয়। ১৩ অক্টোবর গাজীপুরে একটি কাভার্ডভ্যান বোঝাই সিলিন্ডারে গ্যাস নিতে গিয়ে বিস্ম্ফোরণে পাঁচজন অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে একজন পরদিন মারা যান। এর পর সিএনজি স্টেশনগুলো সিলিন্ডারের গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

সিএনজি মালিকরা বলছেন, এভাবে গ্যাস দেওয়া অবৈধ হলেও কারখানা মালিকদের চাপে ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেক স্টেশন থেকেই সিলিন্ডারে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এতে আর্থিক লাভ হলেও নানা ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হয়।

তিতাসের একজন কর্মকর্তা জানান, যানবাহন ছাড়া কারখানার জন্য সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি ও পরিবহন অবৈধ। তিনি বলেন, এসব সিলিন্ডার গ্যাস পরিবহনের জন্য নিরাপদ নয়। এ ছাড়া যেভাবে ভ্যানে, ট্রাকে, নছিমনে সিলিন্ডার বহন করা হয়, তা ঝুঁকিপূর্ণ।

সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস দিতে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও সিরামিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)

সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে পৃথক চিঠি দিয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা হয়েছে। এর পর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ চাপে ও সঠিক পরিমাণে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের চাপ কম থাকায় এবং অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সকাল ৮টার পর থেকে গ্যাসের চাপ শূন্য পিএসআইয়ে (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চাপ) আসে। রাত ১১টার পর কিছুটা উন্নতি হয়। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা গ্যাসের অভাবে অলস সময় অতিবাহিত করেন। এতে রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী তৈরি পোশাক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রদানসহ একাধিকবার আলোচনা করা হলেও কার্যকরী কোনো সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আদেশ ধরে রাখতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস দিতে সিএনজি স্টেশন মালিকদের সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ। কারণ, বর্তমানে সিএনজি স্টেশনগুলো সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে চাচ্ছে না।

বিসিএমইএর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত চিঠিতেও গ্যাস স্বল্পতার কথা তুলে ধরে বলা হয়, ছয় মাস ধরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা, এমনকি মাঝেমধ্যে একটানা কয়েক দিন পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে না সিরামিক কারখানাগুলো। অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এতে উদ্যোক্তাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনা করে, চিঠি দিয়েও সমাধান মিলছে না। এ পরিস্থিতিতে কারখানাগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর সমকালকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন তাঁদের কাছে সিলিন্ডারে গ্যাস চাচ্ছে। বিধি অনুসারে তাঁরা এভাবে গ্যাস দিতে পারেন না। তাই এ বিষয়ে নির্দেশনা পেতে রোববার (আজ) পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেবেন তাঁরা। সরকার অনুমতি দিলে কারখানায় সিলিন্ডারে গ্যাস দেওয়া হবে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। এজন্য বিজিএমইএ ও বিসিএমইএকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে তারা যেন সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ও আইনগত অনুমতি গ্রহণ করে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সমকালকে বলেন, অনুরোধ পেলে তাঁরা বিধিবিধান যাচাই করে দেখবেন সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহের জন্য সিএনজি মালিকদের অনুমতি দেওয়া যায় কিনা।

দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৬৪ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৩৮ কোটি ঘনফুট।

আরও পড়ুন

×