সুখবর
বনেদি মহাশোলের নতুন অতিথি

মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ | ১৩:৩৯
মহাশোল- বিপন্ন বনেদি মাছ। দেশে এত দিন ছিল এই মাছের দুটি প্রজাতি, তাও বিলুপ্তপথের যাত্রী। মৎস্যবিজ্ঞানীরা দিলেন শুভবার্তা। বান্দরবানের থানচি পাহাড়ের কোলঘেঁষা সাঙ্গু নদীতে মিলেছে নতুন এক মহাশোলের খোঁজ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গত রোববার মহাশোলের নতুন প্রজাতির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে Tor barakae। এখন প্রজাতিটি সংরক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করবেন তাঁরা। এটি নিয়ে দেশে মিঠাপানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬১।
বিএফআরআই বলছে, এক বছর আগে রাঙামাটি উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা মহাশোলের খোঁজে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সহযোগিতায় সমীক্ষা চালান। বান্দরবানের থানচির সাঙ্গু নদীতে আন্ধারমানিক, বোরো মদক ও লিগরি এলাকায় যেখানে পানির গভীরতা এবং তলদেশে পাথরের মাত্রা বেশি, সেখানেই এ প্রজাতির খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। সংগ্রহের পর মাছটির বাহ্যিক গঠন ও অন্য সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে প্রজাতি শনাক্ত করতে ডিএনএ বারকোডিং করা হয়। মাছটি সর্বোচ্চ ১৫ কেজি ওজন হতে পারে। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আজহার আলীর নেতৃত্বে বিজ্ঞানী দলে আরও ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুনাইরা রশিদ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইমদাদুল হক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগের মহাশোলের দুটি প্রজাতির একটি ছিল সোনালি মহাশোল (Tor tor), অন্যটি লাল-পাখনা মহাশোল (Tor putitora)। নেত্রকোনার কংস ও সোমেশ্বরী নদীতে ছিল এদের আবাস। এ দুই প্রজাতির মহাশোল মূলত পাহাড়ি ঝরনা প্রবাহিত স্রোতস্বিনী জলাশয়ে বাস করে। পাথরের শরীরে লেগে থাকা শেওলা জাতীয় খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আজহার আলী জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, মাছটির আঁইশ মহাশোলের মতো হলেও পাখনার রং দেশের অন্য প্রজাতির মহাশোলের মতো হলদেটে নয়; মুখ অনেকটাই সরু। কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণায় সংগ্রহ করা নমুনায় Tor barakae নামে মহাশোলের রেফারেন্স জিনোমের সঙ্গে শতভাগ সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ২০১৫ সালে আইইউসিএন বলেছে- মহাশোল বিপন্ন প্রজাতির দামি মাছ। মহাশোল নেত্রকোনার কংস ও সোমেশ্বরী নদীতেই পাওয়া যায়- এমন ধারণা বদলে দিয়ে এখন সাঙ্গু নদীতে মিলেছে। মাছটি দামি ও আকারে বড় হওয়ায় এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক। মহাশোলের নতুন এ প্রজাতির প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে শিগগিরই গবেষণা শুরু হবে। মাছটি চাষের আওতায় আনা গেলে দেশে সার্বিক মাছের উৎপাদন বাড়বে।
- বিষয় :
- সুখবর