মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই ভাই ঢাকায় গ্রেপ্তার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৪:১১ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৪:১১
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডলকে রাজধানীর উত্তর মান্ডা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। বৃহস্পতিবার রাতে এ অভিযান চালানো হয়। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ওয়াহেদ ছদ্মপরিচয়ে তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বশেষ ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, তার ভাই ও একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ওই সময় তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা সদর শাখার সদস্য সচিব। তার বাবা ও একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি আব্দুল জব্বার মন্ডল গাইবান্ধা সদর শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। বাবার সঙ্গে যোগসাজসে ওয়াহেদ ও তার ভাই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালায়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, ২০০৯ সালে গাইবান্ধার আদালতে ওয়াহেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৪ সালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকে। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারও জামিনের আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত। তখন আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। পলাতক অবস্থায় আসামি আব্দুর জব্বার ও রঞ্জু মিয়া মারা যায়। আরেক আসামি মোন্তাজ আলী এখনও পলাতক। এ মামলার অন্যতম আসামি ওয়াহেদ ২০১৬ সাল থেকে আদালতে হাজিরা দেননি। আত্মগোপনে থাকলেও তিনি মাঝেমধ্যে গোপনে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেন। শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি একটি তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করতেন। নিজের নাম-ঠিকানা গোপন করে ভুয়া পরিচয় দিতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন অন্যের নামে নিবন্ধিত সিমকার্ড দিয়ে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি উত্তর মান্ডায় তার ছেলের ভাড়া বাসায় এসেছিলেন।
এদিকে একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি শিহাব করিম জানান, একাত্তরে জাছিজার রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ও অন্য আসামিরা ১৯৭১ সালের ১৮ অক্টোবর গাইবান্ধা সদরের সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ মোট আটটি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেন। সেইসঙ্গে ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। আসামিরা শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এ ছাড়াও তারা সাহাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন-চারশ' মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ২০০৯ সালে জাছিজার ও তার বাবাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পলাতক জাছিজারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
র্যাব-২ জানায়, ২০১৬ সালে জামিন নামঞ্জুর হলে জাছিজার আত্মগোপনে চলে যায়। এতদিন তিনি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার বাসা বদল করেছেন। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় বাবার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন।